শরীকে কুরবানী; এখনই সতর্ক হোন

শরীকে কুরবানী

শরীকে কুরবানী আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি নিয়ম। অধিকাংশ মানুষই চায়, শরীকে কুরবানী দিতে। কেউ তো অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল থাকায় শরীকে কুরবানী দিয়ে থাকে। আবার কারো কারো থাকে ভিন্ন কোন নিয়ত। নিচে আমরা এ বিষয়ে আমাদের কিছু সতর্কতার কথা আলোচনা করব।

সাত ভাগে কুরবানী দেওয়ার হাদীস

উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

عن جابر قال : أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر كل سبعة منا في بدنة.

জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন যে, আমরা একটি গরু এবং একটি উটে সাতজন করে শরীক হয়ে যাই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৩

خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ : فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلّ سَبْعَةٍ مِنّا فِي بَدَنَةٍ.

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে প্রতি উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আদেশ করলেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৮

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نَحَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‏.‏

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাইবিয়ার (সন্ধির) বছর একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উটও সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী করেছি। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯০৪;

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ

জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (একটি) গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানী করা যাবে)। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮০৮

এই হাদীসে একটি উট ও গরু সাতজনের পক্ষে যথেষ্ট হওয়ার কথা আছে। তাই অধিকাংশ আহলে ইলমের মতে, উট বা গরু সর্বোচ্চ সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। আলী রা., আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা., আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে এমনটি বর্ণিত আছে।

এছাড়া আতা রাহ., তাওস রাহ., সালেম রাহ., হাসান রাহ. ও আমর ইবনে দীনার রাহ., ছাওরী রাহ., আওযায়ী রাহ., শাফেয়ী রাহ., আবু ছাওর রাহ. ও হানাফীগণও অনুরূপ বলেন। তবে ওমর রা.-এর মতে, একটি প্রাণী সাতজনের পক্ষে যথেষ্ট হতে পারে না। ইমাম মালেক রাহ.-ও অনুরূপ মত পোষণ করেন।

ইমাম আহমাদ রাহ. বলেন, সাতজনের পক্ষ থেকে একটি প্রাণী যথেষ্ট না হওয়ার মতটি ওমর রা. ব্যতীত অন্য কেউ পোষণ করেন বলে আমার জানা নেই। -আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৬৪

ছাগল, ভেড়া বা দুম্বাতে শরীকে কুরবানী জায়েয?

ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এতে শরীকে কুরবানী জায়েয নয়। এমন একটি পশু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন-

أنّ رَسولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ  أمَرَ بكَبْشٍ أقْرَنَ يَطَأُ في سَوادٍ، ويَبْرُكُ في سَوادٍ، ويَنْظُرُ في سَوادٍ، فَأُتِيَ به لِيُضَحِّيَ به، فَقالَ لَها: يا عائِشَةُ، هَلُمِّي المُدْيَةَ، ثُمَّ قالَ: اشْحَذِيها بحَجَرٍ، فَفَعَلَتْ: ثُمَّ أخَذَها، وأَخَذَ الكَبْشَ فأضْجَعَهُ، ثُمَّ ذَبَحَهُ، ثُمَّ قالَ: باسْمِ اللهِ، اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُحَمَّدٍ، وآلِ مُحَمَّدٍ، ومِن أُمَّةِ مُحَمَّدٍ، ثُمَّ ضَحّى بهِ.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য বড় শিং এবং দুই পা, হাঁটু ও চোখের আশপাশে কালো বর্ণ বিশিষ্ট একটি দুম্বা সংগ্রহের আদেশ করলেন। অতঃপর তা আনা হলে তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আসো। অতঃপর বললেন, পাথর দিয়ে তা ধার দাও। আমি তা করলাম। অতঃপর তিনি তা নিলেন এবং দুম্বাটিকে ধরে শোয়ালেন। এরপর-

باسْمِ اللهِ، اللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُحَمَّدٍ، وآلِ مُحَمَّدٍ، ومِن أُمَّةِ مُحَمَّدٍ .

বলতে বলতে তা যবাই করলেন। -মুসলিম, ১৯৬৭; আবু দাউদ, ২৭৯২

এখানে হাদীসে-

اللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُحَمَّدٍ، وآلِ مُحَمَّدٍ.

(হে আল্লাহ! আপনি তা মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কবুল করুন।) শব্দ থেকে বোঝা যায়, একটি কুরবানী ব্যক্তি ও তার পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে গৃহিত হয়।

হাদীসের ব্যাখ্যা

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, কুরবানীতে ব্যক্তির সাথে তার পরিবার-পরিজনদের অংশীদার হওয়ার দুটি অর্থ হতে পারে। যথা :

১. কুরবানী একজনের পক্ষ থেকেই আদায় হবে। তবে কুরবানীদাতা তার কুরবানীর সওয়াবটুকু অন্যদেরকে হাদিয়া করে দিবেন।

২. দ্বিতীয় অর্থ হল, কুরবানীর ছাগলের মালিকানার মধ্যেই অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত হবে এবং তা দ্বারা একাধিক ব্যক্তির কুরবানী আদায় হয়ে যাবে।

অন্যান্য দলীলের আলোকে ইমাম আবু হানীফা রাহ. এই হাদীসে প্রথম অর্থেই পরিবার-পরিজনদের শরীক হওয়া উদ্দেশ্য নিয়েছেন। অর্থাৎ ব্যক্তির সাথে তার পরিবার-পরিজন শুধু কুরবানীর সওয়াবে অংশীদার হবে। মূল কুরবানীতে নয়। -তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৩/৫৬৪

শরীকে কুরবানী; যে বিষয়ে লক্ষ রাখা আমাদের কর্তব্য

আমরা যারা শরীকে কুরবানী দিবো, তাদের প্রত্যেকেই শরীক নির্বাচনে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক হওয়া কাম্য। অন্যথায় দেখা যাবে, অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে আমি কুরবানী করলাম ঠিকই, কিন্তু আমার কুরবানী সহীহ্ হলো না। আল্লাহর দরবারে আমার কুরবানী কবুল হলো না।

শরীকে কুরবানীতে শরীক নির্বাচনে সতর্কতা

. বিশুদ্ধ নিয়ত

নিয়ত সহীহ্ না হলে আমার কুরবানী যেমন সহীহ্ হবে না, তেমনি আমার শরীকের নিয়ত সহীহ্ না হলেও আমার কুরবানী সহীহ্ হবে না। একইভাবে আমার নিয়ত সহীহ্ না হলেও আমার শরীকের কুরবানী সহীহ্ হবে না।

لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۳۷﴾

আল্লাহর কাছে পৌছায় না সেগুলোর গোশত এবং রক্ত, বরং তার কাছে পৌছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি এদেরকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াত করেছেন; কাজেই আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। -সুরা হজ্ব ৩৭

قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۲﴾ۙ

বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই জন্য। -সুরা আনআম ১৬২

عَلْقَمَة بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “‏إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ‏”‏‏.‏

’আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত, আমি ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে। -বুখারী, হাদীস নং ১

عن أبي أمامة الباهلي قال جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقال أرأيت رجلا غزا يلتمس الأجر والذكر ماله فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا شيء له فأعادها ثلاث مرات يقول له رسول الله صلى الله عليه و سلم لا شيء له ثم قال إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان له خالصا وابتغي به وجهه.

আবু উমামা আল-বাহিলী রা. বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি কী মনে করেন, এক ব্যক্তি সাওয়াব ও নাম অর্জনের জন্য জিহাদ করল তার প্রতিদান কী? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য কোন প্রতিদান বরাদ্দ নেই। লোকটি তখন প্রশ্নটি বারবার দোহরালো আর নবীজীও তাকে একই উত্তর দিলেন। অত:পর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ তায়ালা কেবল ঐ ব্যক্তির আমলই কবুল করেন, যে আমলটি খালেছ আল্লাহর জন্য করে এবং কেবলই সাওয়াবের আশায় করে থাকে। -সুনানে নাসায়ী ৩১৪০

. হালাল উপার্জনকারী হওয়া

আমি যার সঙ্গে শরীকে কুরবানী দিব তার উপার্জন হালাল হওয়া। তা নাহলে শরীকে কুরবানী দাতাদের কারোর কুরবানীই সহীহ্ হবে না। সাথে সাথে আমার উপার্জনও হালাল হতে হবে। তা নাহলে আমার কারণেও কারোর কুরবানীই সহীহ্ হবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لاَ يُبَالِي الْمَرْءُ بِمَا أَخَذَ الْمَالَ أَمِنْ حَلاَلٍ أَمْ مِنْ حَرَامٍ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল অর্জন করল হালাল উপায়ে না হারাম উপায়ে। -বুখারী ২০৮৩

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ ‏(‏يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ‏)‏ وَقَالَ ‏(‏يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ‏)‏ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ ‏”‏ ‏.

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা’আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।” (সূরা আল মু’মিনূন ২৩: ৫১)

তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোন! আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযিক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২: ১৭২)।

অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু’আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”। -মুসলিম ১০১৫

৩. লোক দেখানোর জন্য কুরবানী না করা

শরীকে কুরবানী দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার কিংবা কোন শরীকের যদি লোক দেখানোর জন্য কুরবানী করে, তাহলেও কারোরই কুরবানী সহীহ্ হবে না। অতএব, কোন শরীক যদি কুরবানীর পশুর কোন ছবি -চাই তা কুরবানীর আগে হোক কিংবা কুরবানী করার পর- ফেইসবুকে শেয়ার করে, অনলাইনে পোস্ট করে তাহলে কারোর কুরবানীই সহীহ্ হবে না।

কারণ, এটা দ্বারা বুঝা যায় যে, তার নিয়ত আল্লাহর জন্য কুরবানী করার নয়। বরং লোক দেখানোর জন্য কুরবানী করাই মুখ্য। তা নাহলে এটা অনলাইনে প্রচার করার কী আছে। এজন্য খেয়াল রাখবো, আমি শরীকে কুরবানীর ক্ষেত্রে এমন কাউকে শরীক হিসেবে নিবো না, যার লোক দেখানোর মানসিকতা আছে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ وَمَنْ يُسَمِّعْ يُسَمِّعِ اللَّهُ بِهِ ‏”‏ ‏.

আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করবে, আল্লাহ তা’আলাও তাকে তা-ই দেখাবেন (অর্থাৎ সে প্রদর্শনীমূলক আমল করলে তা প্রচার করে দেখানো হবে) এবং সুনাম-সুখ্যাতির অন্বেষণের উদ্দেশ্যে যে লোক আমল করবে, আল্লাহ তা’আলাও তার আমল (দোষ-ত্রুটিগুলো) প্রচার করে দেবেন। -তিরমিযী ২৩৮১

যে হাদীস বলতে গিয়ে চার বার বেহুশ হলেন

أَبُو عُثْمَانَ الْمَدَنِيُّ، أَنَّ عُقْبَةَ بْنَ مُسْلِمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ شُفَيًّا الأَصْبَحِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّهُ، دَخَلَ الْمَدِينَةَ فَإِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَدِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسُ فَقَالَ مَنْ هَذَا فَقَالُوا أَبُو هُرَيْرَةَ ‏.‏ فَدَنَوْتُ مِنْهُ حَتَّى قَعَدْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُوَ يُحَدِّثُ النَّاسَ فَلَمَّا سَكَتَ وَخَلاَ قُلْتُ لَهُ أَنْشُدُكَ بِحَقٍّ وَبِحَقٍّ لَمَا حَدَّثْتَنِي حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَقَلْتَهُ وَعَلِمْتَهُ ‏.‏ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَفْعَلُ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَقَلْتُهُ وَعَلِمْتُهُ ‏.‏

ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً فَمَكَثَ قَلِيلاً ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ‏.‏ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ فَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا وَهُوَ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ‏.‏

ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ وَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ أَفْعَلُ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا مَعَهُ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَهُ أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ‏.‏ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً شَدِيدَةً ثُمَّ مَالَ خَارًّا عَلَى وَجْهِهِ فَأَسْنَدْتُهُ عَلَىَّ طَوِيلاً ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ حَدَّثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم

أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَنْزِلُ إِلَى الْعِبَادِ لِيَقْضِيَ بَيْنَهُمْ وَكُلُّ أُمَّةٍ جَاثِيَةٌ فَأَوَّلُ مَنْ يَدْعُو بِهِ رَجُلٌ جَمَعَ الْقُرْآنَ وَرَجُلٌ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَرَجُلٌ كَثِيرُ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لِلْقَارِئِ أَلَمْ أُعَلِّمْكَ مَا أَنْزَلْتُ عَلَى رَسُولِي قَالَ بَلَى يَا رَبِّ ‏.‏ قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا عُلِّمْتَ قَالَ كُنْتُ أَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ ‏.‏ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ إِنَّ فُلاَنًا قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ‏.‏

وَيُؤْتَى بِصَاحِبِ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ أَلَمْ أُوَسِّعْ عَلَيْكَ حَتَّى لَمْ أَدَعْكَ تَحْتَاجُ إِلَى أَحَدٍ قَالَ بَلَى يَا رَبِّ ‏.‏ قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا آتَيْتُكَ قَالَ كُنْتُ أَصِلُ الرَّحِمَ وَأَتَصَدَّقُ ‏.‏ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلاَنٌ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ‏.‏

وَيُؤْتَى بِالَّذِي قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ فِي مَاذَا قُتِلْتَ فَيَقُولُ أُمِرْتُ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِكَ فَقَاتَلْتُ حَتَّى قُتِلْتُ ‏.‏ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلاَنٌ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رُكْبَتِي فَقَالَ ‏”‏ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أُولَئِكَ الثَّلاَثَةُ أَوَّلُ خَلْقِ اللَّهِ تُسَعَّرُ بِهِمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏ ‏.‏

وَقَالَ الْوَلِيدُ أَبُو عُثْمَانَ فَأَخْبَرَنِي عُقْبَةُ بْنُ مُسْلِمٍ أَنَّ شُفَيًّا هُوَ الَّذِي دَخَلَ عَلَى مُعَاوِيَةَ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا ‏.‏ قَالَ أَبُو عُثْمَانَ وَحَدَّثَنِي الْعَلاَءُ بْنُ أَبِي حَكِيمٍ أَنَّهُ كَانَ سَيَّافًا لِمُعَاوِيَةَ فَدَخَلَ عَلَيْهِ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ قَدْ فُعِلَ بِهَؤُلاَءِ هَذَا فَكَيْفَ بِمَنْ بَقِيَ مِنَ النَّاسِ ثُمَّ بَكَى مُعَاوِيَةُ بُكَاءً شَدِيدًا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ هَالِكٌ وَقُلْنَا قَدْ جَاءَنَا هَذَا الرَّجُلُ بِشَرٍّ.

ثُمَّ أَفَاقَ مُعَاوِيَةُ وَمَسَحَ عَنْ وَجْهِهِ وَقَالَ صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏:‏ ‏(‏مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ‏)‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

শুফাই আল-আসবাহী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, কোন একদিন তিনি মদীনায় পৌছে দেখতে পেলেন যে, একজন লোককে ঘিরে জনতার ভিড় লেগে আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ইনি কে? উপস্থিত লোকেরা তাকে বলল, ইনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) (শুফাই বলেন), আমি কাছে গিয়ে তার সামনে বসলাম। তখন লোকদের তিনি হাদীস শুনাচ্ছিলেন।

তারপর তিনি যখন নীরব ও একাকী হলেন, আমি তাকে বললাম, আমি সত্যিকারভাবে আপনার নিকট এই আবেদন করছি যে, আপনি আমাকে এমন একটি হাদীস শুনাবেন, যা আপনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং জেনেছেন।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, আমি তাই করব, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন এবং আমি তা বুঝেছি ও জেনেছি। আবূ হুরাইরা (রাঃ) একথা বলার পর বেহুশ হয়ে পড়েন।

অল্প সময় এভাবে থাকলেন। তারপর হুশ ফিরে পেলে তিনি বললেন, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ঘরের মধ্যে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তখন আমি ও তিনি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) পুনরায় বেহুশ হয়ে পড়েন। তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে মুখমণ্ডল মুছলেন, তারপর বললেন, আমি তোমার নিকট অবশ্যই এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তখন এই ঘরে তিনি ও আমি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না।

আবূ হুরাইরা আবার বেহুশ হয়ে গেলেন; তিনি পুনরায় হুশে ফিরে এসে তার মুখমণ্ডল মুছলেন এবং বললেন, আমি তা করব। আমি অবশ্যই তোমার নিকট এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যাহা তিনি আমাকে বর্ণনা করেছেন।

আমি তখন তার সাথে এই ঘরে ছিলাম। আমি আর তিনি ব্যতীত তখন আর কেউ ছিলনা। আবূ হুরাইরা (রাঃ) পুনরায় আরো গভীরভাবে তন্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি অনেকক্ষণ তাকে ঠেস দিয়ে রাখলাম। তারপর হুশ ফিরে এলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য কিয়ামত দিবসে তাদের সামনে হাযির হবেন। সকল উন্মাতই তখন নতজানু অবস্থায় থাকবে।

তারপর হিসাব-নিকাশের জন্য সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিদের ডাকা হবে তারা হলো কুরআনের হাফিয, আল্লাহ্ তা’আলার পথের শহীদ এবং প্রচুর ধনৈশ্বর্যের মালিক। সেই কারী (কুরআন পাঠক)-কে আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেন, আমি আমার রাসূলের নিকট যা প্রেরণ করেছি তা কি তোমাকে শিখাইনি? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, শিখিয়েছেন।

তিনি বলবেন, তুমি যা শিখেছ সে অনুযায়ী কোন কোন আমল করেছ? সে বলবে, আমি রাত-দিন তা তিলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। আল্লাহ তা’আলা তাকে আরো বলবেন, বরং তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, তোমাকে বড় কারী (হাফিয) ডাকা হোক। আর তা তো ডাকা হয়েছে।

তারপর সম্পদওয়ালা ব্যক্তিকে হাযির করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদশালী বানাইনি? এমনকি তুমি কারো মুখাপেক্ষী ছিলেনা? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, তা বানিয়েছেন। তিনি বলবেন, আমার দেয়া সম্পদ হতে তুমি কোন কোন (সৎ) আমল করেছ? সে বলবে, আমি এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রেখেছি এবং দান-খাইরাত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা’আলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, মানুষের নিকট তোমার দানশীল-দানবীর নামের প্রসার হোক, আর এরূপ তো হয়েছেই।

তারপর যে লোক আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় শাহাদাৎ বরণ করেছে তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি কিভাবে নিহত হয়েছ? সে বলবে, আমি তো আপনার পথে জিহাদ করতে আদিষ্ট ছিলাম। কাজেই আমি জিহাদ করতে করতে শাহাদাৎ বরণ করেছি।

আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, আর ফেরেশতারাও তাকে বলবে তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা’আলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে লোকমুখে একথা প্রচার হোক যে, অমুক ব্যক্তি খুব সাহসী বীর। আর তাতো বলাই হয়েছে।

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাটুতে হাত মেরে বললেনঃ হে আবূ হুরাইরা কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টির মধ্য হতে এ তিনজন দ্বারাই প্রথমে জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে।

ওয়ালীদ অর্থাৎ আবূ উসমান আল-মাদাইনী বলেন, উকবা ইবনু আমাকে বলেছেন যে, উক্ত শুফাই (শাফী) এ হাদীসটি মু’আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বর্ণনা করেন। আবূ উসমান আরো বলেন, আলা ইবনু আবূ হাকীম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সে (শাফী) ছিল মু’আবিয়া (রাঃ)-এর তলোয়ারবাহক।

সে বলেছে যে, জনৈক ব্যক্তি মু’আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এসে উক্ত হাদীসটি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তখন মু’আবিয়া (রাঃ) বলেন, যদি তাদের সাথে এমনটি করা হয় তাহলে অন্যসব লোকের কি অবস্থা হবে?

তারপর মুআবিয়া (রাঃ) খুব বেশি কান্না করলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি কাঁদতে কাঁদতে মারা যাবেন। আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, এই লোকটিই আমাদের এখানে অনিষ্ট নিয়ে এসেছে (অর্থাৎ সে এই হাদীসটি বর্ণনা না করলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না)।

ইতিমধ্যে মু’আবিয়া (রাঃ) হুশ ফিরে পেলেন এবং তার চেহারা মুছলেন, তারপর বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন। (এই বলে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ)

“যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর সৌন্দর্য কামনা করে, আমি দুনিয়াতে তাদের কর্মের পূর্ণ ফল প্রদান করে থাকি এবং সেখানে তাদেরকে কম প্রদান করা হবে না। তাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছু নেই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা বিফলে যাবে” (সূরাঃ হুদ- ১৫, ১৬)। -তিরমিযী ২৩৮২

সারকথা :

শরীকে কুরবানী দিলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, শরীক হিসেবে যাকে আমি শরীক বানাচ্ছি, তার নিয়ত সহীহ্ কি না? উপার্জন হালাল কি না? লোক দেখানোর জন্য কুরবানী করে নাকি আল্লাহর জন্য কুরবানী করে? এগুলো একেকটি এমন রোগ যার একটিই কারো মধ্যে থাকলে কুরবানী সহীহ্ হবে না। তাহলে কারো মধ্যে যদি সবগুলোই থাকে তাহলে তার সঙ্গে আমার কুরবানী সহীহ্ হবে কি করে?

অতএব, ভালো হয়, যদি একাকী কুরবানী দেয়া যায়। বেশি সামর্থ না থাকলে একাকী শুধু দুম্বা ছাগল দিয়েও তো কুরবানী করা যায়। তাই ভালো শরীক না পেলে অন্তত ছাগল দিয়ে একাকী কুরবানী করব। প্রয়োজনে একটির জায়গায় একাধিক কুরবানী করব। তবুও অসৎ শরীক নিয়ে আমার কুরবানী অন্তত বরবাদ করব না।

নবীজী নিজেও শুধু দুম্বা দিয়ে কুরবানী করেছেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন-

أنّ رَسولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ  أمَرَ بكَبْشٍ أقْرَنَ يَطَأُ في سَوادٍ، ويَبْرُكُ في سَوادٍ، ويَنْظُرُ في سَوادٍ، فَأُتِيَ به لِيُضَحِّيَ به، فَقالَ لَها: يا عائِشَةُ، هَلُمِّي المُدْيَةَ، ثُمَّ قالَ: اشْحَذِيها بحَجَرٍ، فَفَعَلَتْ: ثُمَّ أخَذَها، وأَخَذَ الكَبْشَ فأضْجَعَهُ، ثُمَّ ذَبَحَهُ، ثُمَّ قالَ: باسْمِ اللهِ، اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُحَمَّدٍ، وآلِ مُحَمَّدٍ، ومِن أُمَّةِ مُحَمَّدٍ، ثُمَّ ضَحّى بهِ.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য বড় শিং এবং দুই পা, হাঁটু ও চোখের আশপাশে কালো বর্ণ বিশিষ্ট একটি দুম্বা সংগ্রহের আদেশ করলেন। অতঃপর তা আনা হলে তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আসো। অতঃপর বললেন, পাথর দিয়ে তা ধার দাও। আমি তা করলাম। অতঃপর তিনি তা নিলেন এবং দুম্বাটিকে ধরে শোয়ালেন। এরপর-

باسْمِ اللهِ، اللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُحَمَّدٍ، وآلِ مُحَمَّدٍ، ومِن أُمَّةِ مُحَمَّدٍ .

বলতে বলতে তা যবাই করলেন। -মুসলিম, ১৯৬৭; আবু দাউদ, ২৭৯২

আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিসের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য জাযাকাল্লাহ্।

Check Also

রোযা ও তারাবীর মাসায়েল

রোযা ও তারাবীর মাসায়েল জানা আমাদের সবার জন্যই জরুরী।  যাতে করে আমাদের সকলের রোযাগুলো সহীহ্ …

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন?

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন? প্রবন্ধটি তালাকের ক্ষেত্রে একটি সহজ সরল উপস্থাপন। এতে একজন স্বামী তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!