গরমের এই তীব্রতায় মুমিনের করণীয়
গরমের এই কঠিন সময়ে আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। প্রথমত: আমাদের জানা দরকার গরমের এই তীব্রতা কিভাবে হয়? কেন হয়? ভূমিকা স্বরুপ একটি আয়াত উল্লেখ করছি:
قال تعالى: ظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت أيدي الناس ليذيقهم بعض الذي عملوا لعلهم يرجعون. –الروم 41
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।
আয়াতের ব্যাখ্যা
আয়াত আমাদেরকে বলছে, দুনিয়াতে যত বিপদাপদ, মহামারি, অশান্তি, ফেতনা-ফাসাদ, মুসলিম নিধন, নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার, পরিবারে অশান্তি, অন্যায় হত্যা, বাবা ছেলেকে, সন্তানাদি বাবা-মাকে হত্যা, দেশে অশান্তি সহ যাবতীয় বিপর্যয় আমাদের হাতের কামাই। আমাদের কৃতকর্মের কারণেই এসব হচ্ছে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমি যদি কোন মহামারির, ফাসাদের কারণ হই তাহলে আমি সবচাইতে বড় জালেম। অর্থাৎ মনে করুন, পরকিয়া, পর্দাহিনতা, অবাধ মেলা-মেশা, যিনা-ব্যভিচার, সুদ-ঘুষ ইত্যাদী যে কোন হারাম কাজের মধ্যে কেউ লিপ্ত হলো, তাহলে সে কিন্তু সবচাইতে বড় জালেম।
কারণ, তার এই কাজের কারণে আল্লাহর উক্ত ঘোষণা অনুযায়ী দুনিয়াতে বিপর্যয় দেখা দিবে। তাহলে সে তো সারা বিশ্বে বিপদাপদ, বালা-মসিবত এর কারণ হলো। তার কারণেই তো দুনিয়াতে এসব মহামারি শুরু হলো। তাহলে সে শুধু নিজের উপর জুলুম করেছে তা নয়। বরং সারা বিশ্বের সকল মানুষ ও মাখলুকের উপর সে জুলুম করেছে। একারণে সে সবচাইতে বড় জালেম।
হযরত শাকীক্ব বলখী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি হারাম মাল খায়, সে কেবল যার কাছ থেকে মাল নেয়া হয়েছে, তার প্রতিই জুলুম করে না; বরং সমগ্র মানব-জাতীর প্রতিই জুলুম করে থাকে। -মাআরিফুল কুরআন, সূরা রুম ৪১
জমিনে অপরাধের হদ কায়েম করা
কেউ অপরাধ করলে দুনিয়াতে শরয়ী যে শাস্তি দেয়া আবশ্যক তার কারণ এটাই যে, সে অপরাধ করে সারা বিশ্বের উপর/দেশের উপর সে জুলুম করেছে। এখন তাকে এমন শাস্তিই দেয়া দরকার যাতে আগামীতে দেশের মানুষ আর এমন অপরাধ না করতে পারে।
হাদীসে এটাই বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “حَدٌّ يُعْمَلُ بِهِ فِي الأَرْضِ خَيْرٌ لأَهْلِ الأَرْضِ مِنْ أَنْ يُمْطَرُوا أَرْبَعِينَ صَبَاحًا ”. ابن ماجه: 2538
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জনপদে একটি হদ্দ কার্যকর করা সেই জনপদে চল্লিশ দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার তুলনায় উত্তম। -ইবনে মাজাহ ২৫৩৮
এর কারণ এটাই যে, শাস্তি কার্যকর করলে মানুষ সামনে আর এমন করার সাহস পাবে না।
অপরাধির কারণে দুনিয়াও কষ্ট পায়
একজন মানুষের অপরাধের কারণে যেহেতু দুনিয়াতে বিপরযয় আসে তাই বিশ্বের মানুষই শুধু কষ্ট পায় না; বরং স্বয়ং দুনিয়াও কষ্ট পায়। দুনিয়া এমন অপরাধির মৃত্যুতে শান্তিপায়।
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ بْنِ رِبْعِيٍّ الأَنْصَارِيِّ أَنَّهُ كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْمُسْتَرِيحُ وَالْمُسْتَرَاحُ مِنْهُ قَالَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللهِ وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وَالْبِلاَدُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ. بخاري: 6512
ক্বাতাদাহ ইবনু রিবঈ আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন। একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি বললেনঃ সে সুখী অথবা (অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! ’মুস্তারিহ’ ও ’মুস্তারাহ মিনহু’-এর অর্থ কী?
তিনি বললেনঃ মু’মিন বান্দা দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শান্তিপ্রাপ্ত হয়। -সহীহ্ বুখারী ৬৫১২
গরমের তীব্রতা এবং বৃষ্টি না হওয়া আমাদের হাতের কামাই
গরমের মৌসুমে কঠিন খরতাপ হয়ে থাকে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। গরমের তীব্রতায় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠে। এসবের কারণও কিন্তু আমরাই। আমাদের কৃতকর্মের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে, মানুষ যাকাত না দেওয়ার কারণে জমিনে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ “يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ.
وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيتَخَيرُوا مِمَّا أَنزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَينَهُمْ ”. ابن ماجه: 4019
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও।
যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, শাসকের তরফ থেকে অত্যাচার কঠিন বিপদ-মুসীবত।
যখন যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। -ইবনে মাজাহ ৪০১৯
আল্লাহ্ তায়ালা এটাই বলছেন,
قال تعالى: ظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت أيدي الناس ليذيقهم بعض الذي عملوا لعلهم يرجعون. –الروم 41
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।
এমন আজাব ও গজব তথা সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসবে, যা থেকে কেউ রক্ষা পাবে না এবং সে প্রকৃতির রোষ থেকে নিরপরাধ লোকরাও রেহাই পাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
وَاتقُوا فِتنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (25)
‘তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম (অত্যাচারী-অপরাধী) শুধু তাদিগকেই ক্লিষ্ট করবে না এবং জেনে রাখো নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা আনফাল : ২৫)।
শীত গ্রীষ্ম কেন হয়?
عن أَبي هُرَيْرَةَ رضـــــ قال قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اشْتَكَتْ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ رَبِّ أَكَلَ بَعْضِيْ بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَأَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنْ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُوْنَ مِنْ الزَّمْهَرِيْرِ. بخاري: 3260
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক।’ –সহীহ্ বুখারী ৩২৬০
হাদিসের উদ্দেশ্য মূলত জাহান্নামের তীব্রতাকে স্মরণ করানো। যেন বান্দা এটা স্মরণ করে জাহান্নামের কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তীব্র দাবদাহে জাহান্নামের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়।
অতিরিক্ত গরম জাহান্নামের নিঃশ্বাস
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ. بخاري: 539
আবূ যার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্যিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়ায্যিন আযান দিতে চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। -সহীহ্ বুখারী ৫৩৯
গরম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে বৃষ্টির মাধ্যমে
গরম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বৃষ্টির দরকার। কিন্তু এই বৃষ্টি কখন হবে তা আমাদের জানা নেই।
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ (34)
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ (إِنَّ اللهَ عِنْدَه عِلْمُ السَّاعَةِ ج وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ ج وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ط وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ط وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌمبِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوْتُ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ). بخاري: 4627
সালিম ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অদৃশ্যের চাবি পাঁচটি- ’’নিশ্চয় আল্লাহরই কাছে রয়েছে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সম্বন্ধীয় জ্ঞান এবং তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর তিনিই জানেন যা কিছু আছে গর্ভাধারে। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন’’- (সূরাহ লুকমান ৩১/৩৪)। -সহীহ্ বুখারী ৪৬২৭
তীব্র দাবদাহে মুমিনের আমল
১. পানি পান করানো
عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ أَفَأَتَصَدَّقُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ قُلْتُ فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ قَالَ سَقْيُ الْمَاءِ
সা’দ ইবন উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতা ইনতিকাল করেছেন, আমি কি তার পক্ষ হতে সাদাকা করব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ কোন্ সাদাকা উত্তম? তিনি বললেনঃ পানি পান করানো (-র ব্যবস্থা করা)। -সুনান আন-নাসায়ী ৩৬৬৫ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ইবনে মাজাহ ৩৬৮৪
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ وَأَمْرُكَ بِالْمَعْرُوفِ وَنَهْيُكَ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلاَلِ لَكَ صَدَقَةٌ وَبَصَرُكَ لِلرَّجُلِ الرَّدِيءِ الْبَصَرِ لَكَ صَدَقَةٌ وَإِمَاطَتُكَ الْحَجَرَ وَالشَّوْكَةَ وَالْعَظْمَ عَنِ الطَّرِيقِ لَكَ صَدَقَةٌ وَإِفْرَاغُكَ مِنْ دَلْوِكَ فِي دَلْوِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ ” .
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।
পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। পথ হতে পাথর, কাটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। -তিরমিযী ১৯৫৬
কেউ পানি চাইলে নিষেধ না করা
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الشَّىْءُ الَّذِي لاَ يَحِلُّ مَنْعُهُ قَالَ الْمَاءُ وَالْمِلْحُ وَالنَّارُ ” . قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا الْمَاءُ قَدْ عَرَفْنَاهُ فَمَا بَالُ الْمِلْحِ وَالنَّارِ قَالَ ” يَا حُمَيْرَاءُ مَنْ أَعْطَى نَارًا فَكَأَنَّمَا تَصَدَّقَ بِجَمِيعِ مَا أَنْضَجَتْ تِلْكَ النَّارُ وَمَنْ أَعْطَى مِلْحًا . فَكَأَنَّمَا تَصَدَّقَ بِجَمِيعِ مَا طَيَّبَ ذَلِكَ الْمِلْحُ وَمَنْ سَقَى مُسْلِمًا شَرْبَةً مِنْ مَاءٍ حَيْثُ يُوجَدُ الْمَاءُ فَكَأَنَّمَا أَعْتَقَ رَقَبَةً وَمَنْ سَقَى مُسْلِمًا شَرْبَةً مِنْ مَاءٍ حَيْثُ لاَ يُوجَدُ الْمَاءُ فَكَأَنَّمَا أَحْيَاهَا ” .
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে যা সংগ্রহে বাধা দেয়া হালাল নয়? তিনি বলেনঃ পানি, লবণ ও আগুন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেয়া যাবে না? তিনি বলেনঃ হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করলো, সে যেন ঐ আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করলো।
যে ব্যক্তি লবণ দান করলো, ঐ লবণে খাদ্য যতোটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করলো। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করলো এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করলো। -ইবনে মাজাহ ২৪৭৪
অতএব, তীব্র দাবদাহে আমাদের আমলের মধ্যে একটি হলো মানুষকে পানি পান করানো।
২. ইবাদতে অলসতা না করা
গরমের এই তীব্রতায় ইবাদতে অবহেলা না করা। বরং আরো বেশি ইবাদতে মশগুল হওয়া এবং কান্নাকাটি করা। কারণ, জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চাইতে বহুগুণ উত্তপ্ত।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّيْنَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا. بخاري: 3265
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল।’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো ঊনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সম পরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।’ –সহীহ্ বুখারী ৩২৬৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “أُوقِدَ عَلَى النَّارِ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى احْمَرَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى ابْيَضَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى اسْوَدَّتْ فَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ ” . ترمذي: 2591
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা রং ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং তা এখন ঘোর কালো বর্ণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। -তিরমিযী ২৫৯১
৩. পশু-পাখীর প্রতি সদয় হওয়া
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ غُفِرَ لِامْرَأَةٍ مُومِسَةٍ مَرَّتْ بِكَلْبٍ عَلَى رَأْسِ رَكِيٍّ يَلْهَثُ قَالَ كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَشُ فَنَزَعَتْ خُفَّهَا فَأَوْثَقَتْهُ بِخِمَارِهَا فَنَزَعَتْ لَهُ مِنْ الْمَاءِ فَغُفِرَ لَهَا بِذَلِكَ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। রাবী বলেন, পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে তার উড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল।’ -সহীহ্ বুখারী ৩৩২১
৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং বেশি থেকে বেশি ইস্তেগফার পড়া
গরমের এই কঠিন তীব্রতা থেকে আমাদের বাঁচতে হলে প্রথমত: আমাদেরকে আমাদের কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে কাঁদতে হবে, গুনাহের কাজ ছাড়তে হবে এবং খুব বেশি ইস্তেগফার এর এহতেমাম করতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে,
عن أبي سعيد رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال من قال حين يأوي إلى فراشه استغفر الله العظيم الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه ثلاث مرات غفر الله ذنوبه وإن كانت مثل زبد البحر وإن كانت عدد ورق الشجر وإن كانت عدد رمل عالج وإن كانت عدد أيام الدنيا. ترمذي: 3397
আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন লোক (শোয়ার জন্য) বিছানাগত হয়ে তিনবার বলেঃ “আমি আল্লাহ আ’আলার নিকট মাফের আবেদন করি, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, এবং তার নিকট তাওবা করি”, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির সমতুল্য হয়ে থাকে, যদিও তা গাছের পাতার মত অসংখ্য হয়, যদিও তা টিলার বালিরাশির সমান হয়, যদিও তা দুনিয়ার দিনসমূহের সমসংখ্যক হয়। -তিরমিযী ৩৩৯৭
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ”مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ”. أبوداود: 1518
ইবনু ’আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ’আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। -আবু দাউদ ১৫১৮
৫. কাজের সময় পরিবর্তন করা
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَأَرَادَ الْمُؤَذِّنُ أَنْ يُؤَذِّنَ لِلظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ أَبْرِدْ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يُؤَذِّنَ فَقَالَ لَهُ أَبْرِدْ حَتَّى رَأَيْنَا فَيْءَ التُّلُولِ فَقَالَ النَّبِيُّ إِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَإِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلاَةِ. بخاري: 539
আবূ যার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্যিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়ায্যিন আযান দিতে চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। -সহীহ্ বুখারী ৫৩৯
উক্ত হাদীসে যোহরের নামাজ দেরীতে পড়াের কথা রয়েছে। এমনিভাবে দুনিয়াবী কাজেরও সম্ভব হলে রুটিন পরিবর্তন করা যেতে পারে।
৬. গোসল করা
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ كَانَ النَّاسُ يَنْتَابُونَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مِنْ مَنَازِلِهِمْ وَالْعَوَالِيِّ فَيَأْتُونَ فِي الْغُبَارِ يُصِيبُهُمْ الْغُبَارُ وَالْعَرَقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُمْ الْعَرَقُ فَأَتَى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنْسَانٌ مِنْهُمْ وَهُوَ عِنْدِي فَقَالَ النَّبِيُّ لَوْ أَنَّكُمْ تَطَهَّرْتُمْ لِيَوْمِكُمْ هَذَا.
‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি ও উঁচু এলাকা হতেও জুমু‘আহর সালাতের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তারা ধূলি মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ হতে ঘাম বের হত। একদা তাদের একজন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে। -সহীহ্ বুখারী ৯০২
এর মাধ্যমে গরমের তীব্রতার সময় গোসলের প্রয়োজনীয়তা উপোলব্ধি করা যায়।
৭. মাথায় পানি দেওয়া
عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ النَّاسَ فِي سَفَرِهِ عَامَ الْفَتْحِ بِالْفِطْرِ، وَقَالَ: تَقَوَّوْا لِعَدُوِّكُمْ، وَصَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ: قَالَ: الَّذِي حَدَّثَنِي لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَرْجِ يَصُبُّ عَلَى رَأْسِهِ الْمَاءَ، وَهُوَ صَائِمٌ مِنَ الْعَطَشِ، أَوْ مِنَ الْحَرِّ
আবূ বকর ইবনু আব্দুর রহমান (রহ.) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো এক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছরে এক সফরে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লোকদের প্রতি সওম ভঙ্গের নির্দেশ দিতে দেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দুশমনের মোকাবিলায় তোমরা শক্তি সঞ্চয় করো।
অবশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সওম রেখেছেন। আবূ বকর (রহঃ) বলেন, হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’আল-’আর্জ’ নামক সথানে পিপাসার কারণে বা গরমের ফলে সওমরত অবস্থায় তাঁর মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি। -আবু দাউদ ২৩৬৫
৮. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ . وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنَ النَّارِ ”
আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক জান্নাতের জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট তিনবার প্রার্থনা করলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোন লোক তিনবার জাহান্নাম হতে পানাহ (আশ্রয়) চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহ তা’আলার নিকট বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। -তিরমিযী ২৫৭২, ইবনে মাজাহ্ ৪৩৪০
أَبُو سَعِيدٍ الْفِلَسْطِينِيُّ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ حَسَّانَ، عَنِ الْحَارِثِ بْنِ مُسْلِمٍ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ عَنْ أَبِيهِ مُسْلِمِ بْنِ الْحَارِثِ التَّمِيمِيِّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ أَسَرَّ إِلَيْهِ فَقَالَ: إِذَا انْصَرَفْتَ مِنْ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ فَقُلْ: اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ سَبْعَ مَرَّاتٍ، فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ ثُمَّ مِتَّ فِي لَيْلَتِكَ كُتِبَ لَكَ جِوَارٌ مِنْهَا، وَإِذَا صَلَّيْتَ الصُّبْحَ فَقُلْ كَذَلِكَ، فَإِنَّكَ إِنْ مِتَّ فِي يَوْمِكَ كُتِبَ لَكَ جِوَارٌ مِنْهَا
আল-হারিস ইবনু মুসলিম আত্-তামীমী থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চুপে চুপে বলেন, যখন তুমি মাগরিবের সালাত থেকে অবসর হয়ে সাতবার বলবেঃ (আল্লাহুম্মা আযিরনী মিনান্-নার) ’’হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। তুমি তা বলার পর ঐ রাতে মারা গেলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লেখা হবে।
আর যখন তুমি ফজরের সালাত শেষ করবে তখনও অনুরূপ বলবে, অতঃপর তুমি যদি ঐ দিন মারা যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লেখা হবে। মুহাম্মাদ ইবনু শু’আইব (রহঃ) বলেন, আবূ সাঈদ (রহঃ) আমাকে আল-হারিস (রাঃ) সূত্রে জানিয়েছেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তা চুপে চুপে বলেছেন, যাতে আমি আমার ভাইদের নিকট তা বিশেষভঅবে প্রচার করি। -আবু দাউদ ৫০৭৯
৯. বৃষ্টি চেয়ে দুআ ও ইস্তেগফার করা
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَجُلاً دَخَلَ الْمَسْجِدَ يَوْمَ جُمُعَةٍ مِنْ بَابٍ كَانَ نَحْوَ دَارِ الْقَضَاءِ وَرَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يَخْطُبُ فَاسْتَقْبَلَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمًا ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَلَكَتْ الْأَمْوَالُ وَانْقَطَعْتِ السُّبُلُ فَادْعُ اللهَ يُغِيثُنَا فَرَفَعَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ أَغِثْنَا اللَّهُمَّ أَغِثْنَا اللَّهُمَّ أَغِثْنَا قَالَ أَنَسٌ وَلاَ وَاللهِ مَا نَرَى فِي السَّمَاءِ مِنْ سَحَابٍ وَلاَ قَزَعَةً وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ سَلْعٍ مِنْ بَيْتٍ وَلاَ دَارٍ قَالَ فَطَلَعَتْ مِنْ وَرَائِهِ سَحَابَةٌ مِثْلُ التُّرْسِ فَلَمَّا تَوَسَّطَتْ السَّمَاءَ انْتَشَرَتْ ثُمَّ أَمْطَرَتْ فَلاَ وَاللهِ مَا رَأَيْنَا الشَّمْسَ سِتًّا
ثُمَّ دَخَلَ رَجُلٌ مِنْ ذَلِكَ الْبَابِ فِي الْجُمُعَةِ وَرَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَائِمٌ يَخْطُبُ فَاسْتَقْبَلَهُ قَائِمًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَلَكَتْ الْأَمْوَالُ وَانْقَطَعَتْ السُّبُلُ فَادْعُ اللهَ يُمْسِكْهَا عَنَّا قَالَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا اللَّهُمَّ عَلَى الْآكَامِ وَالظِّرَابِ وَبُطُونِ الْأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ قَالَ فَأَقْلَعَتْ وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشَّمْسِ قَالَ شَرِيكٌ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ أَهُوَ الرَّجُلُ الْأَوَّلُ فَقَالَ مَا أَدْرِي
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি জুমু’আহ’র দিন দারুল কাযা (বিচার করার স্থান)-এর দিকের দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। এ সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল!
ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন।
আনাস (রাযি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মেঘ নেই, মেঘের সামান্য টুকরা ও নেই। অথচ সাল’আ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। তিনি বলেন, হঠাৎ সাল’আর ওপাশ হতে ঢালের মত মেঘ উঠে এল এবং মধ্য আকাশে এসে ছড়িয়ে পড়লো। অতঃপর প্রচুর বর্ষণ হতে লাগল। আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সূর্য দেখতে পাইনি।
এর পরের জুমু’আয় সে দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন।
আনাস (রাযি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দু’ হাত তুলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ্! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন। আনাস (রাযি.) বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বেরিয়ে রোদে চলতে লাগলাম। (রাবী) শরীক (রহ.) বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কি আগের সেই লোক? তিনি বললেন, আমি জানি না। -সহীহ্ বুখারী ১০১৪
সাথে সাথে ইস্তিগফারও অব্যাহত রাখা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا (10) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (11) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا (12)
অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। -সূরা নূহ ১০-১২
১০. অন্যায় অপরাধ থেকে ফিরে আসা, তাওবা করা
প্রত্যেকেই নিজেদের জীবনের কৃত কর্মের কথা স্মরণ করে রুনাজারী করা এবং নিজ নিজ গুনাহ্ থেকে তাওবা করা।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ” بَيْنَمَا ثَلاَثَةُ نَفَرٍ يَتَمَشَّوْنَ أَخَذَهُمُ الْمَطَرُ فَأَوَوْا إِلَى غَارٍ فِي جَبَلٍ فَانْحَطَّتْ عَلَى فَمِ غَارِهِمْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَانْطَبَقَتْ عَلَيْهِمْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ انْظُرُوا أَعْمَالاً عَمِلْتُمُوهَا صَالِحَةً لِلَّهِ فَادْعُوا اللَّهَ تَعَالَى بِهَا لَعَلَّ اللَّهَ يَفْرُجُهَا عَنْكُمْ .
فَقَالَ أَحَدُهُمُ اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي وَالِدَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَامْرَأَتِي وَلِيَ صِبْيَةٌ صِغَارٌ أَرْعَى عَلَيْهِمْ فَإِذَا أَرَحْتُ عَلَيْهِمْ حَلَبْتُ فَبَدَأْتُ بِوَالِدَىَّ فَسَقَيْتُهُمَا قَبْلَ بَنِيَّ وَأَنَّهُ نَأَى بِي ذَاتَ يَوْمٍ الشَّجَرُ فَلَمْ آتِ حَتَّى أَمْسَيْتُ فَوَجَدْتُهُمَا قَدْ نَامَا فَحَلَبْتُ كَمَا كُنْتُ أَحْلُبُ فَجِئْتُ بِالْحِلاَبِ فَقُمْتُ عِنْدَ رُءُوسِهِمَا أَكْرَهُ أَنْ أُوقِظَهُمَا مِنْ نَوْمِهِمَا وَأَكْرَهُ أَنْ أَسْقِيَ الصِّبْيَةَ قَبْلَهُمَا وَالصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَمَىَّ فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ دَأْبِي وَدَأْبَهُمْ حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا مِنْهَا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ . فَفَرَجَ اللَّهُ مِنْهَا فُرْجَةً فَرَأَوْا مِنْهَا السَّمَاءَ .
وَقَالَ الآخَرُ اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَتْ لِيَ ابْنَةُ عَمٍّ أَحْبَبْتُهَا كَأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النِّسَاءَ وَطَلَبْتُ إِلَيْهَا نَفْسَهَا فَأَبَتْ حَتَّى آتِيَهَا بِمِائَةِ دِينَارٍ فَتَعِبْتُ حَتَّى جَمَعْتُ مِائَةَ دِينَارٍ فَجِئْتُهَا بِهَا فَلَمَّا وَقَعْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا قَالَتْ يَا عَبْدَ اللَّهِ اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَفْتَحِ الْخَاتَمَ إِلاَّ بِحَقِّهِ . فَقُمْتُ عَنْهَا فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا مِنْهَا فُرْجَةً . فَفَرَجَ لَهُمْ . وَقَالَ الآخَرُ اللَّهُمَّ إِنِّي كُنْتُ اسْتَأْجَرْتُ أَجِيرًا بِفَرَقِ أَرُزٍّ فَلَمَّا قَضَى عَمَلَهُ قَالَ أَعْطِنِي حَقِّي .
فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ فَرَقَهُ فَرَغِبَ عَنْهُ فَلَمْ أَزَلْ أَزْرَعُهُ حَتَّى جَمَعْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَرِعَاءَهَا فَجَاءَنِي فَقَالَ اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَظْلِمْنِي حَقِّي . قُلْتُ اذْهَبْ إِلَى تِلْكَ الْبَقَرِ وَرِعَائِهَا فَخُذْهَا . فَقَالَ اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَسْتَهْزِئْ بِي . فَقُلْتُ إِنِّي لاَ أَسْتَهْزِئُ بِكَ خُذْ ذَلِكَ الْبَقَرَ وَرِعَاءَهَا . فَأَخَذَهُ فَذَهَبَ بِهِ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا مَا بَقِيَ . فَفَرَجَ اللَّهُ مَا بَقِيَ .
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা তিন ব্যক্তি পথে হেঁটে চলছিল। পথে তাদের উপর বৃষ্টি নামল। তখন তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। তখন পর্বতগাত্র থেকে একটি পাথর খন্ড খসে তাদের গুহার মুখে গড়িয়ে পড়ল। ফলে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগল, আপন আপন নেক আমলের প্রতি লক্ষ্য কর, যা তোমরা আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য করেছ এবং সেই নেক আমলের ওয়াসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাক। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।
তখন তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতামাতা ছিলেন অতিশয়র বৃদ্ধ। আমার একজন স্ত্রী ও ছোট ছোট সন্তানাদি ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্য বকরী মাঠে চরাতাম। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এসে আমি সেগুলোর দুধ দোহন করতাম এবং আমি আমার পুত্র কন্যাদের আগে প্রথমেই আমার পিতামাতাকে দুধ পান করাতাম। একদিন একটি গাছ আমাকে দুরে নিয়ে গেল (অর্থাৎ চারণভূমি দুরে ছিল)। এতে আমার ফিরতে রাত হয়ে গেল। আমি তাদের (পিতামাতা) উভয়কে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলাম।
এরপর আমি পূর্বের মতই দুধ দোহন করলাম। আমি দুধ নিয়ে আমার পিতামাতার মাথার কাছে দাড়িয়ে রইলাম এবং তাদের নিদ্রা ভঙ্গ করা পছন্দ করলাম না এবং তাদের আগে সন্তানদের দুধ পান করানোও পছন্দ করলাম না। তখন আমার সন্তানরা পিপাসায় আমার দুই পায়ের কাছে কাতরাচ্ছিল। তাদের ও আমার এই অবস্থা চলল।
অবশেষে ভোর হয়ে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি এই কাজ আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি, তাহলে আমাদের জন্য এতে পাথরে একটা ফোঁকড় করে দিন, যদ্বারা আমরা আসমান দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তা’আলা তাতে একটি ফাঁক করে দিলেন। তা দিয়ে তারা আসমান দেখতে পেল।
আরেক জন বলল, হে আল্লাহ! আমার ঘটনা এই, আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষ যেভাবে নারীকে প্রচণ্ডরূপে ভালবাসে আমি তাকে তেমন ভালবাসতাম। আমি তাকে একান্ত কাছে পেতে চাইলাম। সে তাতে অস্বীকৃতি জানাল এবং একশ দীনার বায়না ধরল। আমি চেষ্টা করে একশ দীনার সঞ্চয় করলাম। এরপর সেগুলো নিয়ে তার কাছে গেলাম।
যখন আমি তার দুই পায়ের মাঝখানে বসলাম, তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে ছিপি খুলো না (কুমারিত্ব নষ্ট করো না)। একথা শুনে আমি তার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আপনি যদি জানেন যে, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি এ কাজ করেছি তাহলে আমাদের জন্য একটি ফোঁকড় করে দিন। তখন তিনি তাদের জন্য আরেকটু ফাঁক করে দিলেন।
অপর ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ফারাক চালের (শস্যের) একজন মজুর নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ সমাধা করে তার প্রাপ্য মজুরী দাবী করল। আমি এক ফারাক (শস্য) তার সামনে পেশ করলাম। কিন্তু সে তা নিলনা। আমি সে শস্য যমীনে চাষ করতে থাকলাম।
পরিশেষে তা দিয়ে গরু-বকরী ও রাখাল সংগ্রহ করলাম। পরে সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর। আর আমার প্রাপ্য পরিশোধের ব্যাপারে আমার উপর যুলুম করো না। আমি বললাম, তুমি এই গরু ও রাখালের কাছে গিয়ে সেগুলো নিয়ে যাও। তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার সঙ্গে ঠাট্রা-মশকরা করো না।
আমি বললাম আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্রা করছি না। ঐ গরু ও তার রাখালদের নিয়ে যাও। তখন সে তা নিয়ে চলে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি একাজটি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি তাহলে অবশিষ্ট অংশ খুলে দিন। তখন আল্লাহ তা’আলা গুহা মুখের অবশিষ্ট অংশ খুলে দিলেন। -সহীহ্ মুসলিম ৬৬৯৮ (ইসলমিক ফাউন্ডেশন)
১১. সালাতুল ইসতিসকার নামাজ পড়া
দেখুন- সহীহ্ বুখারী ১০০৫, ১০১১
আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিসের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য জাযাকাল্লাহ্
One comment
Pingback: কবরের আজাব ও প্রশ্নোত্তর