হোম / যাকাত ক্যালকুলেটর

যাকাত ক্যালকুলেটর

যাকাত ক্যালকুলেটর করার আগে যাকাতের কিছু জরুরী মাসায়েল
যাকাত ক্যালকুলেটর করার আগে যাকাতের কিছু জরুরী মাসায়েল আমাদের জানা একান্ত আবশ্যক। তাই নিম্নে যাকাতের কিছু জরুরী মাসায়েল আলোচনা করা হলো।

যাকাত আদায়ের হুকুম
যাকাত ইসলামের পাঁচ ভিত্তির অন্যতম। এর অস্বীকারকারী ইসলাম থেকে খারেজ হয়ে যায়। আর ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে তা আদায় করে না সে মারাত্নক গুনাহগার ও ফাসেক হয়ে যায়। কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, “তাদের সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং এ দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে। (সূরা তাওবা : ৩৪-৩৫)

মাসআলা : যে ব্যক্তি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা কিংবা এই মূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসায়ী মালের মালিক হয় তার উপর যাকাত ফরয হয়। এই পরিমাণ মালকে নেসাব বলে। (শামী)

মাসআলা : কারও নিকট নেসাব পরিমাণ মাল বছরের শুরু ও শেষে থাকার পর মাঝখানে কমে গেলেও তার যাকাত দিতে হবে। (আলমগীরী)

মাসআলা : যদি কিছু সোনা এবং কিছু রূপা থাকে কিন্তু পৃথকভাবে একটিরও নেসাব পুরা হয় না তবে উভয়ের মূল্য যোগ করলে যে কোন একটির হিসেবে নেসাব পুরা হয় তবে যাকাত ফরয হবে। (আলমগীরী)

মাসআলা : ব্যবসার মাল যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান থাকে তবে এগুলোর যাকাত দিতে হবে। (হেদায়া)

মাসআলা : কারখানা, মিল ইত্যাদীর মেশিনের উপর যাকাত ফরয নয়, তবে এগুলোতে যে মাল তৈরী হয় তার উপর যাকাত ফরয। এমনিভাবে কাঁচা মাল যা কারখানাতে পাকা মাল তৈরীর জন্য রাখা থাকে তার উপরও যাকাত ফরয। (শামী)

মাসআলা : সোনা ও রূপা যে কোন অবস্থায় থাকুকনা কেন নেসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। (বেহেস্তী জেওর)

মাসআলা : কারও নিকট যদি কিছু পরিমাণ সোনা বা রূপা, কিছু পরিমাণ টাকা এবং কিছু পরিমাণ ব্যবসার মাল থাকে, সবকিছুর মূল্য যোগ করলে যদি নেসাব পরিমাণ হয় তবে যাকাত ফরয হবে। (হেদায়া, জাওয়াহেরুল ফিক্হ)

মাসআলা : মিল, কোম্পানী ইত্যাদীর শেয়ার যদি নেসাব পরিমাণ হয় তবে যাকাত ফরয হবে। (জাওয়াহেরুল ফিক্হ)

মাসআলা : প্রভিডেন্ড ফান্ড যা এখনও উসূল হয়নি তার উপর যাকাত ফরয নয়। কিন্তু চাকুরী ছাড়ার পর প্রাপ্ত টাকা যদি নেসাব পরিমাণ হয় তবে যাকাত দিতে হবে। তবে পিছনের বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে না। (জাওয়াহেরুল ফিক্হ)

যাকাতের আধুনিক মাসায়েল

শেয়ার : বর্তমানে দুধরনের শেয়ার হোল্ডার লক্ষ করা যায় (১) যারা আইপিও-তে অংশগ্রহণ করে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শেয়ার খরিদ করে থাকে কোম্পানির বার্ষিক লভ্যাংশ পাওয়ার উদ্দেশ্যে। (২) যারা ক্যাপিটাল গেইন করে অর্থাৎ শেয়ার বাজারে শেয়ার কেনা-বেচাই এদের মূখ্য উদ্দেশ্য থাকে; কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ নেওয়ার জন্য এরা শেয়ার ক্রয় করে না। প্রথম প্রকারের হুকুম হচ্ছে, তারা কোম্পানির ব্যালেন্সশীট দেখে যাকাত আদায় করবে। আর ২য় প্রকারের হুকুম হচ্ছে, শেয়ার বাজারে ঐ শেয়ারের যে মূল্য থাকে তারা ঐ মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করবে।

ব্যাংক একাউন্ট : ব্যাংকের সকল প্রকার একাউন্ট যাকাতযোগ্য। একাউন্ট হোল্ডার নেসাবের মালিক হলেই যাকাত দিতে হবে।

ব্যাংক গ্যারান্টি মানি : বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসেবে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান ও গ্রহণের রেওয়াজ চালু আছে। এক্ষেত্রে যতদিন ব্যাংক গ্যারান্টি মানির মালিক স্বয়ং একাউন্ট হোল্ডার থাকবে ততদিন যাকাত দিয়ে যেতে হবে।

ব্যাংক লোন : সাধারণত যাকাতদাতার কোন করয থাকলে তা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়নমূলক লোন যাকাতের হিসাবের সময় বিয়োগ হবে না।

সিকিউরিটি মানি : বাড়ী বা দোকান ইত্যাদী ভাড়া নেওয়ার জন্য সাধারণত দু’ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়- (১) অগ্রিম ভাড়া বাবদ জামানত বা এডভান্স সিকিউরিটি। এ টাকা কিছু কিছু করে ভাড়া হিসাবে কর্তন করা হয়ে থাকে। (২) ফেরতযোগ্য জামানত, যা মালিকের নিকট বন্ধক হিসেবে রাখা হয়। বাড়ী/ দোকান ছেড়ে দেওয়ার সময় এ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। প্রথম প্রকারের যাকাত আদায় করবে ভাড়া দাতা মালিক। আর ২য় প্রকারের টাকা যেহেতু শরীয়তের দৃষ্টিতে বন্ধকের অন্তর্ভুক্ত; তাই মালিকের জন্য টাকাগুলো যথাযথ হেফাযত করে রাখা ওয়াজিব। এ টাকা ব্যবহার করা তার জন্য জায়েয নয়। কিন্তু বন্ধকগ্রহীতা যদি টাকাগুলো খরচ করে ফেলে তবে এর যাকাত সেই পরিশোধ করবে। আর যথাযথ হেফাযত করলে এর যাকাত আদায় করবে বন্ধকদাতা।

বায়নানামার টাকা : জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কিছু কিনে প্রাথমিকভাবে যে আংশিক টাকা প্রদান করে বায়নানামা চুক্তি হয় সে টাকার মালিক বিক্রেতা। সুতরাং এর যাকাত বিক্রেতা আদায় করবে।

ব্যববসায়িক পণ্যের কোন্ মূল্য ধর্তব্য : যে দিন তার যাকাত বর্ষ পুরা হয়েছে সেদিন তার ব্যবসায়িক পণ্যগুলো একত্রে বিক্রি করে দিলে যে দাম পাওয়া যেত সে মূল্যের হিসাবে যাকাত দিবে।

বিক্রিত পণ্যে বকেয়া টাকার যাকাত : ব্যবসায়ীরা তাদের যে সকল পণ্য বাকিতে বিক্রি করে থাকে এবং তা পাওয়ারও আশা থাকে সে বকেয়া টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে।

ঋণ দিয়ে পরে তা যাকাত বাবদ কর্তন করা : কোন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার পর সে তা আদায়ে গড়িমসি করলে বা আদায়ে অক্ষম হলে তা যাকাত হিসাবে কর্তন করলে যাকাত আদায় হবে না। বরং প্রথমে তাকে ঐ পরিমাণ টাকা যাকাত প্রদান করে পরে তার থেকে ঐ টাকা নিজ পাওনা বাবদ নিয়ে নিতে পারবে। (বিস্তারিত : মাসিক আলকাউসার, রমযান-শাওয়াল ১৪২৬ হি.।)

যাকাত আদায় করার নিয়ম : বছরের হিসাব চাঁদের মাস হিসাবে ধর্তব্য হবে। মালের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ তথা একশত টাকায় আড়াই টাকা যাকাত দিবে। (আলমগীরী)

যাকাত কাকে দেব : যাকাত এমন সব গরীব ও ফকীর-মিসকীনকে দিতে হবে যারা নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়। আর এ ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশী হকদার হচ্ছে দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের গরীব ছাত্র। এখানে যাকাত দিলে বহুগুণে সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ্।

error: Content is protected !!