হোম / বিবাহ তালাক / কুফুর বিধান; Kufu in Islam

কুফুর বিধান; Kufu in Islam

প্রশ্ন :

কুফুর বিধান; Kufu in Islam সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। বর্তমানে কুফু ছাড়া ব্যাপক বিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। বিবাহের পর অনেক অভিভাবক আপত্তিও করে থাকেন। আসলে কুফু ছাড়া বিবাহ সংঘটিত হয় কি? না হলে কুফু ছাড়া বিবাহ হয়ে গেলে করণীয় কি? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর :

কুফুর বিধান; Kufu in Islam

বিবাহের ক্ষেত্রে কুফু শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে কুফু ছাড়া বিবাহ হলে বনি-বনা না হওয়ায় সংসার ভাঙ্গার মত ঘটনা ঘটে। স্বামী-স্ত্রীর মন-মালিন্যতা চলতে থাকে বহু কাল পর্যন্ত। সব শেষে তালাকের মত ঘৃণিত কাজটি ঘটে যায়। তাই কুফুর ‍বিষয়ে আমাদের ধারণা স্বচ্ছ হওয়া কাম্য।

কুফু অর্থ কি

কুফু হলো, বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা। আরবীতে ‘আল-কাফাআ’ শব্দটিও এর স্থলে ব্যবহার হয়। শরীয়ত বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছু বিষয়ে সমতা রক্ষা করার বিধান করেছে। বিবাহের ক্ষেত্রে এই সমতা বিধানকেই মূলত কুফু বলে।

কুফুর অর্থ কি

তাহলে কুফুর অর্থ আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অর্থাৎ বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমতা বিধান।

কুফু সম্পর্কে হাদিস

عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تخيروا لنطفكم وانكحوا الاكفاء وانكحوا اليهم

‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। [ইবনে মাজাহ-১/১৪১, হাদীস নং-১৯৬৮]

কুফু মিলানোর নিয়ম how to match kufu in islam

বিবাহের পূর্বে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে সাতটি বিষয়ে কুফু বা সমতা লক্ষণীয় :

১. বংশের দিক দিয়ে কুফু। অর্থাৎ, এক কুরাইশী অপর কুরাইশীর জন্য, এক আরবী অপর আরবীর জন্য, এক অনারবী অপর অনারবীর জন্য কুফু হিসেবে বিবেচিত হবে। 

বিয়ের ক্ষেত্রে বংশ

বিবাহের ক্ষেত্রে বংশের বিষয়টি অনারবীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, তারা বংশের অবস্থান ধরে রাখেনি। যে যার মত করে নিজেদের জন্য একটি বংশ নির্ধারণ করে নাম দিয়ে দিয়েছে। মূলত: বংশের কোন বাস্তবতা নেই। অবশ্য বংশের বিষয়টি না থাকলেও সম্মান মর্যাদার বিষয়টি তো অবশ্যই আছে। তাই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন পরিবারের মেয়ের জন্য কুফু তেমন পরিবার থেকেই হতে হবে। যেমনটি আমরা এই মাত্র বলে আসলাম।

২. ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে কুফু। অর্থাৎ, যে নারীর এক পূর্ব পুরুষ মুসলিম তার কুফু হওয়ার জন্য পুরুষের কমপক্ষে দুই পূর্ব পুরুষ মুসলিম হওয়া আবশ্যক। আর যেই পুরুষের দুইয়ের অধিক পূর্ব পুরুষ মুসলিম, সে যে কোন মুসলিম নারীর জন্য কুফু হবে। চাই মেয়ের দুই বা তার চেয়ে কম-বেশী পূর্ব পুরুষ মুসলিম হোক না কেন।

৩. স্বাধীন হওয়া। অর্থাৎ, গোলাম স্বাধীন নারীর জন্য কুফু হবে না। বরং গোলাম, বাদীর জন্য এবং স্বাধীন পুরুষ স্বাধীন নারীর কুফু হবে।

৪. সম্পদের দিক দিয়ে কুফু। অর্থাৎ, যে পুরুষ একজন নারীর মহর এবং দৈনিকের খোরপোষ দিতে সক্ষম, সে যে কোন নারীর জন্যই কুফু হবে। এই পরিমাণ সম্পদ যেই পুরুষের নেই, সে কোন নারীর জন্যই কুফু হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, মেয়ের তুলনায় ছেলের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হলেও মহরে মুআজ্জাল (المهر المعجل)  তথা মহরের নগদ আদায়যোগ্য অংশ ও ভরণ-পোষণের সামর্থ্য রাখলে ‘কুফু ফিল মাল’ (অর্থনৈতিক দিক থেকে সমতা) পাওয়া গেছে বলে ধর্তব্য হয়।

৫. ধার্মিকতার দিক দিয়ে কুফু হওয়া। অর্থাৎ, ফাসেক পুরুষ, ন্যায়পরায়ণ ধার্মিক নারীর জন্য কুফু হবে না। বরং ন্যায়পরায়ণ, সৎ, ধার্মিক পুরুষই ওই নারীর জন্য কুফু হবে। এমনভিাবে যে পুরুষ মাদকাশক্ত, জুয়া, সুদ, ঘুষ, পতিতাবৃত্তি, জুলুমকারী বা জুলুমের সাহায্যকারী ইত্যাদী নিকৃষ্ট ও হীন কাজের সাথে জড়িত, তারাও সতী, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক নারীর জন্য কুফু হবে না।

৬. পেশাগত দিক দিয়ে কুফু। অর্থাৎ, পুরুষ মুচি, কামার, ক্লিনার ইত্যাদী এমন নিম্নমানের পেশা-জীবি না হওয়া যা মেয়ের পরিবারে জন্য অপমানজনক হয়। তবে উল্লেখিত পেশা-জীবি লোকেরা তাদের সমপর্যায়ের বা নিম্নপর্যায়ের পরিবারের কুফু হবে।

৭. যে পুরুষ জন্মগত ভাবে অথবা অতি মাদকাশিক্ত বা অন্য কোন কারণে হিতাহিত জ্ঞান হারিযে ফেলে। যার ফলে সে যথা সময়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়। এমন ব্যক্তি সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন নারীর কুফু হবে না।

কুফু মিলিয়ে বিয়ে

ছেলে-মেয়ের বিবাহের ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি সমতা লক্ষ করে বিবাহ কাজ সম্পন্ন করা উচিৎ। এগুলো বিবাহের মৌলিক বিষয়। এগুলোর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো থাকে।

বিবাহের ক্ষেত্রে কুফু kufu in marriage islamqa

অতএব, অভিভাবকগণ যদি কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে গাইরে কুফু তে (সমতা ব্যতিত) বিয়ে দিতে চায় আর মেয়ে উক্ত বিবাহ তে রাজি না হয়, তাহলে অভিভাবকগণ তাকে রাজি করানোর জন্য কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। তবে মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে পিতা এবং দাদা তাকে গাইরে কুফু তে (সমতা ব্যতিত) বিবাহ দিতে পারবে। কিন্তু তাদের জন্য এমনটি করা উচিৎ হবে না। আর এ অধিকার কেবল পিতা এবং দাদার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ ছাড়া অন্য কারো জন্য এ অধিকার নেই।

অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ

পক্ষান্তরে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে যদি অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নিজেই গাইরে কুফ তে (সমতা ব্যতিত) বিয়ে বসে, তাহলে বিবাহ সহীহ্ হয়ে যাবে। তবে অভিভাবকগণ চাইলে এই বিবাহের ব্যাপারে শরয়ী কাজী বা মুসলিম পন্চায়েতের নিকট আপত্তি পেশ করতে পারবে।

অভিভাবকগণ আপত্তি পেশ করলে শরয়ী কাজী বা মুসলিম পন্চায়েত প্রথমিক পর্যায়ে অভিভাবকদের কে বুঝিয়ে এই বিবাহ বহাল রাখার চেষ্টা করবে। তাতে সক্ষম না হলে স্বামীকে তার এই স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য বলবে। এতে স্বামী রাজি না হলে শরয়ী কাজী বা মুসলিম পন্চায়েত অভিভাবকের আপত্তির ভিত্তিতে চাইলে বৈবাহিক এই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারবে।

তবে শরয়ী কাজী বা মুসলিম পন্চায়েতের মাধ্যমে এই বিচ্ছিন্ন করণ তালাক হিসেবে গণ্য হবে না। বরং ‘ফসখে নেকাহ্’ তথা বিবাহ বিচ্ছেদ বলে গণ্য হবে। অতএব, এই বিচ্ছেদ করণের পূর্বে যদি তাদের পরস্পরের মাঝে সহবাস হয়, তাহলে মেয়ে বিাহের মধ্যে নির্ধারিত পূর্ণ মহর পাবে এবং ইদ্দত পালন করতে হবে। আর পরস্পরের মাঝে সহবাস না হয়ে থাকলে মেয়ে মহর পাবে না এবং তার ইদ্দতও পালন করতে হবে না।

গাইরে কুফু তে (সমতা ব্যতিত) বিবাহের কারণে অভিভাবকদের আপত্তির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদের এই সুযোগ স্ত্রী অন্তসত্ত্বা হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে। অন্তসত্ত্বা হয়ে গেলে অভিভাবকদের জন্য আর এই অধিকার থাকবে না। এমনিভাবে কোন একজন অভিভাবক যদি এই বিবাহে সম্মতি দিয়ে দেয়, তাহলে ঐ অভিভাবকের সমপর্যায়ের বা তার নিম্নপর্যায়ের অন্য কোন অভিভাবক এতে আপত্তি করতে পারবে না।

উল্লেখ্য যে, অভিভাবক যদি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সম্মতিক্রমেই গাইরে কুফু তে (সমতা ব্যতিত) বিবাহ দিয়ে দেয়, তাহলে বিবাহ সহীহ্ হয়ে যাবে।

বিয়ের ক্ষেত্রে কুফুর গুরুত্ব

এতক্ষণের আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে কুফুর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, কুফুর প্রতি লক্ষ না রাখা হলে পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অনেক বিষয়ে জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি আল্লাহ্ না করুন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদের মত দুখ:জনক ঘটনাও ঘটে।

ছেলেরা বিবাহ করার ক্ষেত্রে কুফু দেখা জরুরি নয়

ছেলেরা নিজেদের অবস্থানের চেয়ে উঁচু পর্যায়ের মেয়েদের বিবাহ করতে পারবে। তার উজ্জল দৃষ্টান্ত হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমপর্যায়ের কোন নারী পৃথিবীতে ছিল না। কল্পনাও করা যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের গ্রামে বিবাহ করেছেন। হযরত সফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই ইবনে আখতাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা কে বিবাহ করেছেন।

حُكْمُ الْكَفَاءَةِ فِي النِّكَاحِ

اخْتَلَفَ الْفُقَهَاءُ فِي الْحُكْمِ التَّكْلِيفِيِّ لاِعْتِبَارِ الْكَفَاءَةِ فِي النِّكَاحِ: فَذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ وَالْحَنَابِلَةُ إِلَى أَنَّهُ يَجِبُ اعْتِبَارُهَا فَيَجِبُ تَزْوِيجُ الْمَرْأَةِ مِنَ الأْكْفَاءِ، وَيَحْرُمُ عَلَى وَلِيِّ الْمَرْأَةِ تَزْوِيجُهَا بِغَيْرِ كُفْءٍ. وَذَهَبُوا إِلَى أَنَّ الْكَفَاءَةَ تُعْتَبَرُ فِي جَانِبِ الرِّجَال لِلنِّسَاءِ، وَلاَ تُعْتَبَرُ فِي جَانِبِ النِّسَاءِ لِلرِّجَال؛ لأِنَّ النُّصُوصَ وَرَدَتْ بِاعْتِبَارِهَا فِي جَانِبِ الرِّجَال خَاصَّةً، فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ مُكَافِئَ لَهُ، وَقَدْ تَزَوَّجَ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ، وَتَزَوَّجَ صَفِيَّةَ بِنْتَ حُيَيٍّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا

—আল মাওসূআ আল ফিকহিয়্যাহ ৩৪/২৬৭

আরেকটি বিষয় হলো, কুফু বা সমতার আবশ্যকতা মেয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ছেলের জন্য নয়। তাই ছেলের জন্য নিজের থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারে বিবাহ করাও জায়েয। অর্থাৎ ছেলের আর্থিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে গিয়ে বিয়ে করলেও তা জায়েয আছে।

ওলী বা অভিভাবক ছাড়া বিবাহ শুদ্ধ হয় না?

ছেলে-মেয়ে উভয়ে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষ্যির উপস্থিতিতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ও গ্রহণ করা সম্পন্ন করে, তাহলে ইসলামী শরীয়া মুতাবিক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদিও তাদের পরিবারের কেউ কিছুই জানে না। কিংবা যদি তারা অনুমতি নাও দিয়ে থাকে।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার।

-মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ

হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতই না উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে।

আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। -সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১  

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.  أخرجه أبو داود (2096) ، وابن ماجه (1875) ، والنسائي في “الكبرى” (5387) ، وأبو يعلى (2526) ، والطحاوي 4/365، والدارقطني 3/234-235، والبيهقي 7/117 من طريق حسين بن محمد المروذي، بهذا الإسناد.

وأخرجه ابن ماجه (1875) ، والنسائي (5389) ، والدارقطني 3/235 من طريق مُعمر بن سليمان، عن زيد بن حبان، والدارقطني 3/235 من طريق أيوب بن سويد، عن سفيان الثوري، كلاهما عن أيوب السختياني، به.

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল সাঃ সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ী, হাদীস নং-৫৩৬৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৬৬

عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ

হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে]।

তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৫৫}

উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও আরো এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। সুতরাং প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করে নিলে তা সম্পন্ন হয়ে যাবে।

‘যে মহিলাকে তার অভিভাবক বিয়ে দেয়নি, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ হাদীসের ব্যাখ্যা

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا، فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ»، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا، فَإِنْ تَشَاجَرُوا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ مَنْ لَا وَلِيَّ لَهُ»

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে মহিলাকে তার অভিভাবক বিয়ে দেয়নি, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। এরপর স্বামী যদি তার তার সাথে মিলামিশা করে তবে সে মহরের অধিকারী হবে স্বামী তার সাথে [হালাল পদ্ধতিতে] মেলামেশা করার কারণে। আর যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে যার অভিভাবক নেই, বাদশাই তার অভিভাবক বলে বিবেচিত হবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৮৭৯, সুনানে তিরামিজী, হাদীস নং-১১০২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৯

বর্ণনাকারী তার নিজের বর্ণিত হাদীসের উপর নিজেই আমল করেননি

أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ.

বর্ণনাকারী খোদ আয়শা রা. তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫, সুনানুস সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৩৭৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৩৫২২, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৬৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৫

সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত হাদীস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা রাঃ নিজেই বিবাহ শুদ্ধ হয় না একথা বুঝেন নি। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বিয়ে অসম্পূর্ণ হয় অভিভাবক ছাড়া। কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ।

আরেক হাদীসে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مَمْلُوكٍ تَزَوَّجَ بِغَيْرِ إِذْنِ سَيِّدِهِ، فَهُوَ عَاهِرٌ»

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে গোলাম মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে তাহলে সে জিনাকারী। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪২১২, সুনানে দারামী, হাদীস নং-২২৭৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১১১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৭০৫}

আসলে কি গোলাম জিনাকারী হবে? একথাতো কেউ বলেন না। এখানে যেমন সবাই বলেন যে, এর দ্বারা ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। ঠিক তেমনি যেন কোন মেয়ে তার অভিভাবক ছাড়া বিয়ে না করে, কারণ মেয়ে মানুষ হওয়ার কারণে সে পাত্র নির্ণিত করতে ভুল করতে পারে, তাই সতর্ক করে বলা হয়েছে তার বিবাহ বাতিল হওয়ার সমতূল্য। যেমন গোলামের বিবাহ জিনার সমতূল্য। আসলে যিনা নয়।

আসলে বাতিল বলে হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যদি মেয়ে গায়রে কুফুতে বিয়ে করে, তাহলে তার বিয়ে অভিভাবক এসে বাতিল করে দিতে পারে। যেমনটি পূর্বে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি। সে হিসেবে তার বিয়েকে বাতিল বলা হয়েছে।

বিস্তারিত জানতে দেখুন : ইলাউস সুনান-১১/৬৫-৭০ মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ; মিরকাতুল মাফাতীহ-৬/২৬৫-২৭৪; মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ; তুহফাতুল আলমায়ী-৩/৫১৫-৫১৮, মাকতাবা হেযাজ দেওবন্দ

তথ্যসূত্র

রদ্দুল মুহতার ৪/১৯৭ থানবী; মুহিতে বুরহানী ৪/৩১, ২৭; তাতারখানিয়া ৪/১৩২, ১৩৩; হেদায়া ২/৩১৪; কানযুদ দাকোয়েক ২৫৬; কিতাবুল আছল ১০/২০৬-২০৭; শরহুল জামিউস সগীর ২/৪৭৫; ফাতাওয়া কাযিখান ১/৩৫১; মাবসূতে সারাখসী ৫/২৪, ২১-২৯

ফাতাওয়াল ওয়ালওয়া লিজিয়্যাহ্ ১/৩২২; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদিনা ৩/১৩৭;  শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৪/২৫৫; আল-ইখতিয়ার ৩/৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩

মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা ২/২৫৩; আল-জাওহারাতুন নায়্যিরাহ্ ২/৮৮-১০১; জামিউর রুমূয ১/৪৪৯; হিন্দিয়া ১/২৯০-২৯৪; আল-লুবাব ফি শরহিল কিতাব ৪/২৮; খিযানাতুল আকমাল ১/৪০১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১৯৭; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যাহ্ ১/৪৮

আন-নুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১৮৭; বাযযাযিয়া ১/১১৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ দুর ২/৪১; শরহে বেকায়া ২/১৯-২৬; এ‘লাউস সুনান ৮/৩৭৩২; আল-ফিকহুল হানাফী ফি ছাওবিহিল জাদীদ ২/৬৩

আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআ‘ ৪/৪৭-৫২; আত-তাজরীদ ৯/৪৩৮৮-৪৩৯৩; তুহফাতুল ফুকাহা ২/১৬২; বাদায়ে ২/৬৩১; আল-মুখতার লিল ফাতাওয়া ৩৪১; ফাতহুল কাদীর ৩/১৭৫-১৯৫; বেনায়া ৫/১০৭; আল-বাহরুর রায়েক ৩/১২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৯৩

মাজমাউল বাহরাইন ৫২১; মুলাতাকাল আবহুর ২০৮; ফাতাওয়া তারসূসিয়্যাহ্ ৪৮; দুরারুল হুক্কাম ১/৫৩৪; আল-ইযাহ্ ১/৩০০; ফাতাওয়া মুস্তফা যারকা ২৭৮; ফাতাওয়াল বালাদিল হারাম ৫৭৮

আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ৭/২২৭; ইমদাদুল আহকাম ২/৩২৩; ফাতাওয়া দারুল উলিূম যাকারিয়া ৩/৬২৪, ৬২৭; তুহফাতুল আলমায়ী ৩/৫১৬; কেফায়াতুল মুফতী ৫/২০৯; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৮/২১৩; ফাতাওয়া রহিমিয়া ৮/২২০-২২৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/১২২-১৩৩; ইমদাদুল মুফতীন ২/৪৩৯-৪৬১

 ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/২২০-২৬৭; ফাতাওয়া হক্কানিয়া ৪/৩৭৫-৩৯৫; কিতাবুল ফাতাওয়া ৪/৩৭২; ফাতাওয়া উসমানী ২/২৭৯-২৯৪; আপকে মাসায়েল ৬/১৩৬; জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ১/১৭৯-১৮১; দরসে তিরমিযী ৩/৩৭৩; কিতাবুন নাওয়াযেল ৮/৩৫৭

আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিসের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য জাযাকাল্লাহ্

Check Also

রোযা ও তারাবীর মাসায়েল

রোযা ও তারাবীর মাসায়েল জানা আমাদের সবার জন্যই জরুরী।  যাতে করে আমাদের সকলের রোযাগুলো সহীহ্ …

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন?

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন? প্রবন্ধটি তালাকের ক্ষেত্রে একটি সহজ সরল উপস্থাপন। এতে একজন স্বামী তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!