হোম / বিবাহ তালাক / আপনি কিভাবে তালাক দিবেন?

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন?

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন? প্রবন্ধটি তালাকের ক্ষেত্রে একটি সহজ সরল উপস্থাপন। এতে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে কিভাবে সংসার করবে এবং বনিবনা না হলে কী পদক্ষেপ নিবে এবং কখন কিভাবে তালাক দিবে তা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপনি কিভাবে তালাক দিবেন?

আমাদের আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি। তবে বলে রাখি আলোচনাটি খুব বেশি বড়ও নয়, আবার একেবারে ছোটও নয়। তাই বেশি বড় ভেবে আংশিক পড়ে রেখে দিবেন না। আশা করি আপনি পড়তে শুরু করলে শেষ না করে রাখতেও পারবেন না। জাযাকুমুল্লাহ্।

পৃথিবীতে মানুষের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিবাহের বিধান

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিবাহের বিধান দান করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تُقۡسِطُوۡا فِی الۡیَتٰمٰی فَانۡكِحُوۡا مَا طَابَ لَكُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً اَوۡ مَا مَلَكَتۡ اَیۡمَانُكُمۡ ؕ ذٰلِكَ اَدۡنٰۤی اَلَّا تَعُوۡلُوۡا ﴿۳

আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা জুলুম করবে না। (সুরা নিসা, আয়াত ৩)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্ঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি অবনত করে ও লজ্জাস্থানের অধিক হিফাযাত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোযা) রাখে। কেননা, সওম তার জন্য ঢালস্বরূপ (অর্থাৎ, অবৈধ যৌনচাহিদা থেকে বিরত রাখে।) -সহীহ বুখারী, ৫০৬৬, সহীহ মুসলিম, ১৪০০

অন্য হাদীসে বলেন,

عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي أَصَبْتُ امْرَأَةً ذَاتَ حَسَبٍ وَجَمَالٍ، وَإِنَّهَا لَا تَلِدُ، أَفَأَتَزَوَّجُهَا، قَالَ: لَا ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ فَنَهَاهُ، ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ، فَقَالَ: تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ

মাকিল ইবনে ইয়াসার রাযিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক সুন্দরী ও মর্যাদা সম্পন্ন নারীর সন্ধান পেয়েছি। কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিয়ে করবো? তিনি বললেন, না। অতঃপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তৃতীয়বার তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে বললেন, এমন নারীকে বিয়ে করো, যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করবো। -সুনানে নাসায়ী ২০৫০

তালাক কোন গালি নয়

অত্যন্ত আফসোস আর পরিতাপের বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েই চলছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, তালাকের বিধান সর্ম্পকে মানুষের অজ্ঞতা। যখন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ছোটখাটো বিষয়ে মনমালিন্য ও ঝগড়া হয় তখনই স্বামী তাড়াহুড়া করে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বসে কিংবা স্ত্রী তার স্বমীকে ডিবোর্স প্রদানের চিন্তা করে।

অথচ তালাক কোন গালিসূচক শব্দ নয় যে, তার দ্বারা ঝগড়ার সময় রাগ দমন করা হবে!। বরং তালাক হচ্ছে এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ যার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এর দ্বারা দাম্পত্য জীবনে হাজারো দুঃখ- দূর্দশা নেমে আশে।

যেমন স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘ দিনের সাজানো সংসার ভেঙ্গে যাওয়া, সন্তান লালন-পালনে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হওয়া, ভরণ-পোষণ প্রদান, দেন-মহর পরিশোধ ও ঈদ্দত পালনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়া। এমনকি তালাকের মন্দ প্রভাব স্বামী-স্ত্রীকে ছাড়িয়ে তাদের পরিবার, বংশ ও পুরো সমাজে বিস্তার করে। একারণেই আল্লাহ তাআলা তালাকের নির্দেশ দানের পাশাপাশি এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় হচ্ছে তালাক। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَبْغَضُ الحَلَالِ إِلَى اللهِ الطَلَاقُ

আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল হচ্ছে তালাক। -সুনানে আবু দাউদ ২১৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ ২০১৮

অন্যান্য ধর্মের মত ইসলামে তালাকের বিধান কে কঠিন করা হয়নি

খৃস্টান ধর্মে তালাকের কোন বিধান নেই। বরং বাইবেলে তালাককে ব্যবিচারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ইসলাম যেহেতু স্বভাবজাত ধর্ম এজন্য ইসলামে তালাককে এত কঠিন করেনি। কারণ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কখনো এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন তালাক ছাড়া কোন উপায় থাকে না। এমন পরিস্থিতিতেও যদি বিবাহ বন্ধন অটুট রাখতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তাদের জীবনে শুধু অশান্তিই বিরাজ করবে না; বরং সংসারটা হয়ে উঠবে এক টুকরো জাহান্নাম। তাই ইসলাম তালাকের বিধান দানের পাশাপাশি এমন কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে যা মেনে চলা দাম্পত্য জীবনে অত্যন্ত জরুরী।

বনিবনা না হলে স্বামী যা করবেন

প্রথমত স্বামী তার স্ত্রীর ভালো গুণগুলোর কথা চিন্তা করবে। যেমন হাদীস শরীফে আছে,

عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقاً رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ أَوْ قَالَ غَيْرَهُ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে সন্তুষ্ট হবে। -সহীহ মুসলিম ১৪৬৯

অর্থাৎ পৃথিবীতে কোন মানুষই দোষমুক্ত নয়। কোন ব্যক্তির মাঝে একটি দোষ থাকলে তার মাঝে দশটি গুণ থাকতে পারে। তাই একটি দোষ দেখা আর দশটি গুণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কতটুকু ইনসাফের বিষয় হতে পারে!। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ করো তাহলে সম্ভবনা রয়েছে যে তোমরা কোন জিনিসকে অপছন্দ করছ অথচ আলালাহ তাআলা তাতে অনেক কল্যান রেখেছেন। -সুরা নিসা, ১৯

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,

وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا

তোমরা যে নারীদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও এবং শয্যায় পরিত্যাগ করো। এমনকি তাদেরকে প্রয়োজনে প্রহার করো। এতে যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাদের ব্যাপারে আর অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা সমুন্নত মহীয়ান। -সুরা নিসা ৩৪

وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَماً مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَماً مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلاحاً يُوَفِّقِ اللهُ بَيْنَهُمَا

যদি উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা কর, তবে তোমরা এর (স্বামীর) পরিবার হতে একজন ও ওর (স্ত্রীর) পরিবার হতে একজন সালিস নিযুক্ত কর; যদি তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চায়, তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন। -সুরা নিসা ৩৩, ৩৪

আয়াতে স্বামীকে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে বলা হয়েছে

স্ত্রী যদি অবাধ্য হয়, তাহলে তাকে নরম ভাষায় নসীহত করবে। তাতে যদি সংশোধন না হয়, তাহলে শোয়ার স্থান আলাদা করে দিবে। যদি তাতেও সংশোধন না হয়, তাহলে তৃতীয় পর্যায়ে তাকে হালকা প্রহার করবে। যেমন মেসওয়াক বা অনুরুপ বস্তু দ্বারা প্রহার করা।

عن عطاء قلت لابن عباس: ما الضرب غير المبرح؟ قال: بالسواك ونحوه

হযরত আতা রহ. বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাস করলাম হালকা প্রহারের অর্থ কী? তিনি বরলেন মেসওয়াক বা অনুরুপ বস্তু দ্বারা প্রহার করা। -তাফসীরে তাবারী ৩/৯৩৮৬

যদি তাতেও সমাধান না হয়, তাহলে চতুর্থ পর্যায়ে স্বামীর পক্ষ থেকে একজন এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন সালিস স্বামী-স্ত্রীর বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবে। এরপরও না হলে মাত্র এক তালাক দিবে। যদি এতেও কোন সমাধান না হয়, তালে স্ত্রীকে স্পষ্ট শব্দে এক তালাক প্রদান করবে।

তালাক প্রদানের উপযুক্ত সময়

পবিত্র কুরআলানে বর্ণিত হয়েছে,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمْ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ

হে নবী! (লোকদেরকে বলে দিন) তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা করো, তাহলে তাদেরকে ইদ্দতের পুর্বে তালাক প্রদান করবে। -সুরা তালাক ১

উপযুক্ত সময়ের ব্যাখ্যা হাদীস শরীফে এভাবে বর্ণিত হয়েছে,

عن ابنِ عمرَ أنَّهُ طلَّقَ امرأتَهُ وهيَ حائضٌ فسأل عمرُ النبيَّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ فقال : مُرْهُ فليُراجعها ثم ليُطلِّقها طاهرًا أوحاملًا

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তার স্ত্রীকে মাসিক অবস্থায় তালাক দেন। ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে নির্দেশ দাও যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়। অতপর তাকে যেন পবিত্র অবস্থায় তালাক দেয়। -সহীহ মুসলিম ১৪৭৯

যে তুহুরে সহবাস হয়েছে সেই তুহুরে তালাক দেয়া হারাম

أن الطلاق في الطهر الذي جامع فيه حرام

অর্থাৎ, যে তুহুরে (পবিত্র অবস্থায়) স্বামী স্ত্রীর সাথে শারীরিক সর্ম্পকে লিপ্ত হয়েছে তাতে তালাক দেওয়া হারাম। অতএব, এ অবস্থায় তালাক দিতে হলে স্বামীকে আগামী মাসের তুহুর তথা পবিত্র অবস্থার অপেক্ষা করতে হবে। -তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৭/১০২

হাদীসের মর্মার্থ হলো, স্বামী স্ত্রী কে এমন সময়ে তালাক দিবে, যে সময়ে স্ত্রী ঋতুবতী নয় এবং তাতে স্বামী-স্ত্রী শারিরিক সম্পর্কে জড়ায়নি। কেননা, স্ত্ররি ঋতুবতি অবস্থায় তালাক দেওয়া গুনাহ এবং যে তুহুরে (পবিত্র অবস্থায়) স্বামী-স্ত্রী শারিরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে তাতেও তালাক দেওয়া শরীয়ত অনুমোদিত নয়। তা সত্ত্বেও তালাক দিতে হলে স্বামী আগামী মাসের তুহুর তথা পবিত্র অবস্থার অপেক্ষা করবে।

তালাকের ক্ষেত্রে উক্ত পদ্ধতি গ্রহণে অনেক কল্যাণ রয়েছে

১. তালাক যেন স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা এবং ঝগড়ার ফলাফল না হয়।

২. উপযুক্ত সময়ের নির্দেশ এজন্য দেওয়া হয়েছে, যেন স্বামী তালাকের বিষয়টি চিন্তা ফিকির করতে পারে। যেভাবে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ানোর পূর্বে দশ দিক চিন্তা করে, তেমনি তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রেও যেন চিন্তা-ফিকিরের সুযোগ পায়। এর পরও যদি তালাক দিতে বাধ্য হয়, তাহলে স্পষ্ট শব্দের মাধ্যমে এক তালাক দিবে। যা ইদ্দত শেষে বিবাহকে বিচ্ছেদ করে দিবে।

সহীহ্ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিমে রয়েছে, (৭/৯৯)

أن يطلق إمرأته مرة واحدة فقط ثم يتركها حتى تننقضي عدتها

স্বামী তার স্ত্রীকে শুধু এক তালাক দিবে অতঃপর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত তার থেকে বিরত থাকবে। (যা ইদ্দত শেষে বিবাহকে বিচ্ছেদ করে দিবে)।

উক্ত পদ্ধতিতে তালাক দেওয়ার উপকার হলো, স্বামী যদি নিজের ভূল বুঝতে পারে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করা কল্যাণ মনে করে, তাহলে স্ত্রীকে ইদ্দত তথা ঋতুবতী হলে তিনটি মাসিক ঋতুস্রাব অতিবাহিত হওয়া, গর্ভবতী হলে গর্ভ খালাস হওয়া, অন্যথায় তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে।

আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে যায় এবং পূনরায় সংসার করতে আগ্রহি হয়, তাহলে সেক্ষেত্রেও শরীয়ত তাদের জন্য এই রাস্তা খোলা রেখেছে। তারা চাইলে দেন-মহর নির্ধারণপূর্বক দুইজন সাক্ষির উপস্থিতিতে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। অতপর যদি পুনরায় কোন কারণে তালাক দিতে হয় তাহলেও তাড়াহুড়া না করে পূর্বে উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রেখে স্পষ্ট শব্দের মাধ্যমে এক তালাক দিবে।

এই পর্যায়ে আগের তালাকের সাথে মিলে মোট দুই তালাক হবে। এখনো বিষয়টি স্বামীর হাতে থেকে যাবে। তিনি চাইলে ইদ্দতের ভিতরে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে উভয়ে সম্মতিক্রমে দেন-মহর নির্ধারণপূর্বক দুইজন সাক্ষির উপস্থিতিতে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

এ পর্যায়ে স্বমী শুধু এক তালাকের মালিক থাকবে। অতএব পরবর্তীতে কোন কারণে যদি তালাক দিতে হয় এবং আরো এক তালাক দেয় তাহলে এই স্ত্রী তার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। -হেদায়া ২/৩৯৪, ৪২২

উক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, শরীয়ত বিবাহ বন্ধন কে অটুট রাখতে চায় এবং তা আটুট রাখতে অনেক বিধিমালাও আরোপ করেছে। এখন যদি কোন ব্যক্তি এ সকল নিয়ম উপেক্ষা করে ঘটা করে তিন তালাকের দিকে চলে যায়, তাহলে তার জন্য এই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করার আর কোন সুযোগ থাকে না।

আমাদের সমাজ তালাক সম্পর্কে এতটাই অজ্ঞ যে, তারা মনে করে, তিন তালাকের কমে তালাক হয় না। তাই তালাক দিতে হলে তারা তিন থেকেই তালাক দেয়া শুরু করে। কিন্তু কাজটি একেবারেই অনুচিৎ এবং না জায়েয। তালাকের সঠিক পদ্ধতি তাই যা এতক্ষণ আলোচিত হয়েছে। আশা করি পাঠকের প্রত্যেকেই তাদের সাংসারিক জীবনে বিষয়গুলো লক্ষ রাখবেন। আল্লাহ্ সহায় হোন, আমীন।

আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিসের সথে থাকার জন্য অসংখ্য জাযাকাল্লাহ্

Check Also

রোযা ও তারাবীর মাসায়েল

রোযা ও তারাবীর মাসায়েল জানা আমাদের সবার জন্যই জরুরী।  যাতে করে আমাদের সকলের রোযাগুলো সহীহ্ …

আল্লাহু আকবার বাক্যে আলিফ অথবা ‘বা’ টেনে পড়লে নামাজ ভেঙ্গে যাবে কি?

প্রশ্ন :  আল্লাহু আকবার বাক্যে আলিফ অথবা ‘বা’ টেনে পড়লে নামাজ ভেঙ্গে যাবে কি? জনৈক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!