ঈদগাহে খেলাধুলা করার হুকুম কী সম্পর্কে একজন প্রশ্নকারী জানতে চেয়েছেন। নিম্নে তার পূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরছি। অত:পর আমরা এর উত্তর লিখছি ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
ঈদগাহে খেলাধুলা করার হুকুম কী
মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ভাই আমাদের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। আমরা তার পূর্ণ চিঠি পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।
বিসমিল্লাহির রহানির রহীম
বরাবর,
মাননীয় মুফতি সাহেব দা. বা.
আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিস, ঢাকা, বাংলাদেশ।
বিষয়: ঈদগাহে খেলাধুলার হুকুম সম্পর্কে।
মুহতারাম,
আমাদের এলাকাসহ প্রায় এলাকাতেই দেখা যায় ঈদগাহে খেলাধুলা করা হয়। আমার জানার বিষয় হলো, ঈদগাহে খেলাধুলা করার হুকুম কী? এবং ঈদগাহে খেলাধুলা করার বিধান কী?
অতএব,
মুফতি সাহেবের নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, তিনি যেন উক্ত বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকহে ইসলামীর আলোকে সঠিক সমাধাণ জানিয়ে বাধিত করেন।
নিবেদক
মুহাম্মদ আব্দুর রহমান
ঈদগাহে খেলাধুলা করার হুকুম কী প্রশ্নের উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العلمين و الصلاة و السلام على سيّد الأنبياء و المرسلين أمّا بعد
ঈদগাহের জন্য ওয়াকফকৃত জমিনে খেলাধুলা করা জায়েয নয়। ঈদগাহ কতৃপক্ষের দায়িত্ব হলো, ঈদগাহের চারদিকে দেয়াল দিয়ে বেষ্টন করে রাখা। যাতে ঈদগাহকে খেলাধুলার মাঠ হিসেবে বা ঈদগাহের মর্যাদার পরিপন্থি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে না পারে।
والله أعلم بالصواب
দলীল সমূহ
- فتاوى قاضيخان مع الفتاوى الهندية (3/291 دارالكتاب ديوبند) وما إتخذ لصلاة العيد لا يكون مسجدا مطلقا و إنّما يعطى له حكم المسجد في صحة اللإقتداء بالإمام وإن كان منفصلا عن الصفوف و أما فيما سوى ذلك ليس له حكم المسجد و قال بعضهم له حكم المسجد حال أداء الصلاة لا غير و هو و الجبانة سواء يجتنب هذا المكان عما يجتنب المسجد احتياطا.
- الفتاوى البزازية مع الفتاوى الهندية 6/268 (دار الكتاب ديوبند) المتخذ لصلاة الجنازة أو لصلاة العيد حكمه حكم المسجد حتى يجتنب ما يجتنب في المسجد كذا إختاره الفقيه أبو الليث.
- الفتاوى التاتارخانية 8/162-163 (زكريا بكدفو ديوبند) و قال بعضهم: له(ما إتخذ لصلاة العيد)حكم المسجد حال أداء الصلاة لا غير وهو والجبانة سواء و يجتنب هذا المكان عما يجتنب المسجد احتياطا.
- البحر الرائق شرح كنز الدقائق 5/248 (ايج-ايم سعيد) وما إتخذ لصلاة العيد لا يكون مسجدا مطلقا و إنّما يعطى له حكم المسجد في صحة اللإقتداء بالإمام وإن كان منفصلا عن الصفوف و أما فيما سوى ذلك ليس له حكم المسجد و قال بعضهم له حكم المسجد حال أداء الصلاة لا غير و هو و الجبانة سواء يجتنب هذا المكان عما يجتنب المسجد احتياطا.
- رد المحتار على الدر المختار 6/426 (المكتبة الأشرفية) أما مصلى العيد لا يكون مسجدا مطلقا إنما يعطى له حكم المسجد في صحة الإقتداء بلإمام وإن كان منفصلا عن الصفوف و فيما سوى ذلك فليس له حكم المسجد وقال بعضهم:يكون مسجدا حال أداء الصلاة لا غير وهو والجبانة سواء ويجتنب هذا المكان عما يجتنب عنه المساجد احتياطا.
- غنية المستملي في شرح منية المصلي 529 (مكتبة نعمانية)
- حاشية الطحطاوي على الدر المختار2/535 (مكتبة الإتحاد)
- ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৪/১২২-১২৩ (মাকতাবা দারুল উলূম দেওবন্দ)
- ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ২২/৪৪৬ (মাকতাবা মাহমুদিয়া)
- আহসানুল ফাতাওয়া : ৬/৪২৮ (এইচ-এম সাঈদ)
- কিফায়াতুল মুফতী : ৩/১৮৬ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
- ফাতাওয়া হাক্কানিয়্যাহ : ৫/৫৭ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
- ফাতাওয়া রহীমিয়্যাহ : ৬/৩৫৭ (দারুল ইশাআত)
- কিতাবুন-নাওয়াযেল : ১৩/৫৯৬-৫৯৭ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
পুনশ্চ : জানা উচিৎ যে, ঈদগাহে খেলাধুা কে অনেক স্কলার বৈধতা দিয়েছেন। দলীল হিসেবে তারা একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। হাদীসটি হলো,
قَالَتْ عَائِشَةُ وَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُومُ عَلَى بَابِ حُجْرَتِي – وَالْحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فِي مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم – يَسْتُرُنِي بِرِدَائِهِ لِكَىْ أَنْظُرَ إِلَى لَعِبِهِمْ ثُمَّ يَقُومُ مِنْ أَجْلِي حَتَّى أَكُونَ أَنَا الَّتِي أَنْصَرِفُ . فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ حَرِيصَةً عَلَى اللَّهْوِ
আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, তিনি আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন আর হাবশীরা তাদের অস্ত্র দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাসজিদে নবাবীতে তাদের যুদ্ধের কলাকৌশল দেখাচ্ছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দ্বারা আড়াল করে দিচ্ছেন যাতে আমি তাদের খেলা দেখতে পারি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেন, যতক্ষণ আমি নিজে ফিরে না আসি। অতএব অল্পবয়স্কা বালিকাদের খেল-তামাশার প্রতি যে লোভ রয়েছে তার মূল্যায়ন কর (তার সখ পূর্ণ কর)। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৪৯, ইফাবা-১৯৩৪]
আহলে হক মিডিয়াতেও জায়েয বলা হয়েছে। মাসিক আত-তাহরির পত্রিকাতেও বৈধ বলা হয়েছে। ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া এবং ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাতেও বৈধ বলা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এমন খেলাই বৈধ, যা জায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে না জায়েয কোন খেলা সেখানে জায়েয নয়।
মন্তব্য : অধিক সতর্কতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত এটাই, যা আমরা প্রথমে বলে এসেছি। এটাই আমাদের দেশের অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত। মাসিক আলকাউসার এবং মুসলিম বাংলা সহ প্রায় সবগুলো সাইটে না জায়েয বলা হয়েছে। তাছাড়া একচেটিয়া জায়েয বলে দিলে আমাদের দেশের পরিবেশ হিসেবে ঈদগাহের মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে বৈকি। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিসের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য জাযাকাল্লাহ্