কুরবানীর নেসাব বর্তমানে কত টাকা? কত টাকা হলে কুরবানী ওয়াজিব হবে? এ সম্পর্কে মৌলিক কিছু মাসআলা । আমাদের উপর কুরবানী কখন ওয়াজিব?
কুরবানীর নেসাব ২০২৪
সম্পদের ধরনভেদে নেসাবের পরিমাণও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন, স্বর্ণের ক্ষেত্রে কুরবানীর নেসাব হল ২০ মিসকাল। বর্তমান সময়ের হিসাবে সাড়ে সাত ভরি বা ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ। -সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৭৭, ৭০৮২
আর রুপার নেসাব হল ২০০ দিরহাম। বর্তমান সময়ের হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন ভরি বা ৬১২.৩৬ গ্রাম রুপা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা বা এর মূল্য থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৯
সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্য সমান হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব। -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫; -কিতাবুল আসল ৫/৪১২; আল বাহরুর রায়েক ৮/১৭৩; ফতোয়ায়ে শামী ৯/৩৭৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৬/৩২৩
কুবানীর ১ম দিন নেসাব ছিল, পরে আর নেসাব নেই, তাহলে কুরবানী ওয়াজিব হবে?
কুরাবনী ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে শেষ সময়ের হিসাব করা হবে। অর্থাৎ, কুরবানীর ১ম দিন একজন মুকিম ছিল। পরে মুসাফির হয়ে গেছে এবং ১২ যিলহজ্ব সূর্য ডোবা পর্যন্ত সে মুসাফিরই থাকল। তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
তাই কেউ যদি কুরবানীর দিন নেসাবের মালিক হওয়ার পর, পরক্ষণেই বা ১২ যিলহজ্ব সূর্য ডোবা পর্যন্ত নেসাবের আর মালিক না থাকে, তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে এটাকে কুরবানী থেকে বাঁচার অপকৌশল বানানো জায়েয হবে না। -ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া ৬/৪৪৭
কত টাকা থাকলে কুরবানী ওয়াজিব ২০২৪
বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্য ৬৬-৭৫ হাজার মধ্যে থাকছে। অতএব, কারো কাছে যদি স্বর্ণ, রুপা (চাই তা ব্যবহারিত হোক না কেন) এই পরিমাণ টাকার থাকে কিংবা এই পরিমাণ টাকা থাকে অখবা এই পরিমাণ টাকার ব্যবসায়িক সম্পদ বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র থাকে তাহলে বর্তমানে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব
নেসাব পরিমাণ মালের মালিক এর উপর কুরবানী ওয়াজিব। নেসাবের পরিমাণ তাই, যা আমরা এই মাত্র বলে আসলাম। তবে কিছু শর্ত আছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত কয়টি
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন-অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়
পূর্বে বর্ণিত নেসাব এবং শর্ত না পাওয়া গেলে কুরবানী ওয়াজিব হবে না।
মাসআলা : স্বর্ণ-রুপা যে অবস্থায় থাকুক না কেন তা নেসাবের মধ্যে হিসাব হবে। -ফতোয়া আলমগীরী : ১২/১৭৮ ফাতোয়া শামী : ৬/৩২২, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৫/৪২৩
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ
কুরবানীর নেসাবের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ ও আসবাবপত্রও শামিল। যেমন : প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘর, জমি, কাপড়, গাড়ি, পিতল ও তামার বড় ডেগ, শামিয়ানা ইত্যাদির মূল্য যদি নেসাব (সারে বায়ান্ন ভরি রূপা) পরিমাণ হয়, তাহলে এগুলোর কারণে কুরবানী ওয়াজিব হবে।
-ফাতোয়া আলমগীরী: ৫/২৯৩; -বাদায়ে: ৪১৯৩, খোলাসাতুল ফাতোয়া:৪/৩০৯ আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ পৃ: ১/২৭৯, আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ পৃ: ১/৪৮৮, মাজমাউল আনহুর পৃ: ১/৩৮২, আল ফিকহুল হানাফী পৃ: ১/৪৫০, ফাতাওয়া উসমানী পৃ: ২/২০৬।
তবে ডাক্তারি বই, নাহু, ছরফ, বালাগাত, মানতেক, আদব, ফিকাহ ও তাফসিরে বই-পড়ার বা পড়ানোর জন্য যত সংখ্যকই থাকুক, এগুলো নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে না। তবে সে যদি এগুলো পড়তে না পারে বা পড়ার প্রয়োজন না হয়, বা অন্যের জন্য রেখে দেয়, তাহলে এগুলোর কারণে সদকাতুল ফিতর ও কুরবানী ওয়াজিব হবে। ফাতোয়া আলমগীরী: ৫/২৯৩
যাকাত ও কুরবানীর নেসাবের মধ্যে পার্থক্য
যাকাত ও কুরবানীর নেসাবের মধ্যে পার্থক্য সহজ। অর্থাৎ, যাকাতের নেসাবের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র অন্তর্ভূক্ত হয় না। আর কুরবানী ও সদকাতুল ফিতরের নেসাবের মধ্যে তা অন্তর্ভূক্ত হয়।
আহলে সালাফ মিডিয়া সার্ভিসের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য জাযাকাল্লাহ্